সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নেত্রকোনার পূর্বধলা সরকারি কলেজে করোনা পরিস্থিতিতেও পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। আদায়কৃত টাকা কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে খরচের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, অভিযোগের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতনের কাছে জানতে চাওয়ার পরে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পূর্বধলা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপপ্রচারও শুরু করেছেন। যদিও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে পূর্বধলা প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্বধলা সরকারি কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বর্ষ পরিবর্তন পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহের জন্য গত ২০ জানুয়ারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দেয়া হয়। ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি প্রশ্ন বিতরণ এবং ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরপত্র জমাদানের নির্ধারিত তারিখ ছিল। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কলেজের ফেসবুক পেজে ও মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নির্ধারিত তারিখে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক ১ সেট প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত প্রশ্নেই উত্তর শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে নির্ধারিত তারিখে জমা দেয়। ওই দুই পরীক্ষায় কলেজের সাধারণ ও বিএম শাখার দুই শিক্ষাবর্ষের ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর কাছ থকে ৪০০টাকা করে আদায় করা হয়। আদায়কৃত টাকা কলেজ অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়নি বলে কলেজের একটি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছে। আর এই কারণেই সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুন : দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী করোনার মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ, ফি আদায় ও আদায়কৃত টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই টাকা নিজের কাছে রেখেছেন।
সরকারি কলেজের জমি অনুমোদন ছাড়াই ইজারা!
এ ব্যাপারে পূর্বধলা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। প্রথমে পরীক্ষার ফিয়ের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে দাবি করলেও পরে আবার বলেন, পরীক্ষার ফি ব্যাংকে জমা দেয়া হয় না। এছাড়া অন্য সব টাকা তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কলেজের ব্যাংকের হিসেবে জমা রাখা হয়েছে।
করোনার কারণে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কীভাবে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি এ প্রক্রিয়াকে প্রথমে পরীক্ষা না বলে অ্যাসাইনমেন্টর কথা বলেন। তবে, পরে পরীক্ষা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
দৈনিক শিক্ষা পরিবারের নতুন সদস্য ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পূর্বধলা সরকারি কলেজের কো-সিগনেটরি উম্মে কুলসুম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজটি সরকারিকরণের জিও জারি হওয়ার পর থেকে কলেজের পরীক্ষাসহ সব টাকা কলেজের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতনের বিরুদ্ধে সরকারি কলেজের জমি বিধিবর্হিভুতভাবে ইজারা দেয়ারও অভিযোগ আছে। বিষয়টি নিয়ে ‘সরকারি কলেজের জমি অনুমোদন ছাড়াই ইজারা’ শিরোনামে দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশের পরে এবং পরীক্ষা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য অধ্যক্ষের সাথে কথা বলার পরে তিনি এই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করার মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি গত ২৯ এপ্রিল নিজ কার্যালয়ে কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে ডেকে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুললেও কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের চেষ্টার অভিযোগ তুলে এর নিন্দা জানিয়েছে পূর্বধলা প্রেসক্লাব। এদিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আরিফুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতন পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক শিক্ষাডটকমের পূর্বধলা প্রতিনিধি জায়েজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের চেষ্টা করে বিভিন্ন অনলাইনের সংবাদিকদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে এনে একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠ করে শোনান। সেখানে পূর্বধলা প্রেসক্লাবের ২২ সদস্যের মধ্যে কাউকেই ডাকা হয়নি। সেখানে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ তোলা হলেও কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি অধ্যক্ষ। গত ২৯ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে প্রেসক্লাব সভা করেছে। আজ ৩০ এপ্রিল (শুক্রবার) সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার বিষয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে প্রেসক্লাব। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করায় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ অনোয়ারুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।