করোনার দীর্ঘ সংকটে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দীর্ঘ করোনা সংকটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক জটের পাশাপাশি পরীক্ষা ব্যবস্থাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। চাপের মুখে অনলাইন শিক্ষাদান অব্যাহত রাখলেও শহরের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার দীর্ঘকাল অনলাইনে শ্রেণী কার্যক্রম হওয়ায় ‘স্মার্ট ফোন’ ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় পরেছে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকরা। অভিভাবকরাও দুঃচিন্তায়। রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় শিক্ষক নেতা ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, সব শিক্ষার্থীর জন্য অনলাইনে পাঠদান নিশ্চিত করতে হলে বিনামূল্যে স্মার্ট ফোন সেট বিতরণ ও ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে। প্রায় ছয় মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক (শ্রেণী) কার্যক্রম বন্ধ; ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক শেষ হলেও স্কুলমুখী হতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও সবধরনের পাবলিক পরীক্ষাও ঝুলে গেছে। শ্রেণী কার্যক্রম না হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না অভিভাবকরা; নিয়মিত তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে অভিভাবকদের বিভিন্ন সংগঠন করোনাকালীন সময়ে টিউশন ফি অর্ধেক কমানোর দাবি করছেন। অনলাইন ও টেলিভিশনে সীমিত পরিসরে শ্রেণী কার্যক্রম হলেও এর সুফল পাচ্ছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। কারণ অনেকের ‘স্মার্ট ফোন সেট’ ব্যবহারের সামর্থ নেই; ইন্টারনেট সংযোগও ব্যয়বহুল; আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহারও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চোখের জন্য ক্ষতিকর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে শতভাগ ছাত্রছাত্রীকে পাঠলাভের আওতায় আনা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। দীর্ঘকাল শিশু শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোন হাতে রাখতেও পারছে না; এটা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কতটুকু নিরাপদ সেটি নিয়ে ভাবনারও বিষয় রয়েছে।’

অনলাইনে রচনামূলক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়-মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন) পরীক্ষা নেয়া সম্ভব; তবে সেখানেও শতভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে না। স্মার্ট ফোন ব্যবহারের সামর্থ অনেক অভিভাবকের নেই। অনেক শিক্ষার্থী এর ব্যবহারও জানে না; করোনা মহামারীর আগে স্কুলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনুমোদিত ছিল না।’

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটিসহ একটি শিক্ষাবর্ষে মোট সাধারণ ছুটি থাকে ৮৫ দিন। এছাড়া অর্ধবার্ষিকী, টেস্ট ও বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ১২ দিন করে মোট ৩৬ দিন প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পাবলিক বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার জন্য স্কুল বন্ধ থাকে ন্যূনতম ২৫ দিন। আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার জন্য পুরো নভেম্বরই স্কুলে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ হিসেবে একটি শিক্ষাবর্ষের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ন্যূনতম ১৭৬ থেকে ১৮০দিনই স্কুলে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

বর্তমান শিক্ষাবর্ষে গত মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম হয়েছে। এই ছয় মাসে পাবলিক ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কোন পরীক্ষা না হওয়ায় আগামী স্কুল খোলার পরপরই পরীক্ষার চাপে পড়বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এই শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে বসার সুযোগ খুব একটা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক শাখায়েত হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘এমনিতেই শিক্ষাবর্ষের প্রায় অর্ধেক ছুটিতে চলে যায়। এরমধ্যে করোনায় চলে গেছে অর্ধেক শিক্ষাবর্ষ। শ্রেণী কার্যক্রমে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। অনলাইন পাঠদানে এই সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রাজধানীর বাইরের সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা খুব কঠিন। সংকট নিরসনে বিভিন্ন বিকল্প খুঁজে দেখা হচ্ছে।’

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে গত ১৭ মার্চ থেকেই বন্ধ রয়েছে সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৬ মার্চ থেকে টানা ছুটির কবলে পড়ে সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৩০ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে সীমিত পরিসরে অফিস এবং ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু করা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২৭ আগস্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে।

করোনাকালে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষাস্তরে নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী, অনলাইনে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

শ্রেণী কার্যক্রম অনলাইন নির্ভর হলেও পরীক্ষা নিয়ে বেকায়দায় প্রশাসন :

করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় এবছর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন স্কুলভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য এবার পঞ্চমের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাবে না। প্রতিবছর নভেম্বরে পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এবার কেন্দ্রীয়ভাবে অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষা না নেয়ার ঘোষণা দেয়।

করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত রয়েছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মহামারী পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হলেও একাদশ শ্রেণীতে গত ৯ আগস্ট হতে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চলছে; তবে শ্রেণী কার্যক্রম অনিশ্চিত। উচ্চ শিক্ষাস্তরে অনলাইনে সীমিত পরিসরে ক্লাস চালু করেছে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

অনিশ্চিত প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শ্রেণী কার্যক্রম :

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি এখন আর একক কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেই। মহামারীর কারণে এটি এখন সরকারের সমন্বিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিল; এতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দেশগুলোর সরকার। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা কাটছে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি অনলাইন সভায় বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অনুকূলে এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।’

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই সার্বিক পরিস্থিতিতে নজর রাখছেন, তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই তা খুলে দেয়া হবে।’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাই এ নিয়ে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই।’

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জানিয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বরে স্কুল খোলা যেতে পারে সেই প্রস্তুতি নিয়ে দুটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি ও তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যে মাসে স্কুল খোলা যাবে সেই সিলেবাস পড়িয়ে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করা হবে। স্কুল খোলা না গেলে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না, অটো পাস ছাড়া উপায় থাকবে না।’

কমেছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা :

স্কুল খোলা থাকার সময়ে শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ সময় পড়াশোনায় ব্যয় করত করোনাকালীন ছুটির মধ্যে সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে বিশ্বব্যাংকের এক অনলাইন জরিপে তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারিভাবে টেলিভিশনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটির জরিপকালে দেখা গেছে, মাত্র অর্ধেক শিক্ষার্থী এসব ক্লাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। সরকারিভাবে অনলাইন ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারছে মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৯ ভাগ ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব পরেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর।

গত ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস চালু হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার চেষ্টা চলছে। সরকারি পোর্টাল শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে তাদের আগে থেকে রেকর্ড করা কনটেন্ট ইউটিউবে দেয়া হয় এবং শিক্ষার্থীদেরও জানিয়ে দেয়া হয়। অনেক শিক্ষক নিজেরাই কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচার করেন। কিন্তু ইন্টারনেট সেবার বাইরের শিক্ষার্থীরা এসব থেকে বঞ্চিত।

‘টিভি বেজড লার্নি ইন বাংলাদেশ : ইজ ইট রিচিং স্টুডেন্ট?’ শিরোনামে প্রণীত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসের ১৮ তারিখ হতে জুন মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত নবম শ্রেণীর দুই হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে এই সাক্ষাৎকারগুলো নেয়া হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহের এই পরিবারগুলোর মাত্র ১৫ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এজন্য টেলিভিশন শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে জরিপকালে দেখা গেছে, মাত্র ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর টেলিভিশন দেখার সুযোগ রয়েছে। সংসদ টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে আরও কম, মাত্র ৩৯ শতাংশের। জরিপে বলা হয়েছে, ৫২ ভাগ শিক্ষার্থী আগের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় পরিবারের গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করছে। শিক্ষা বহির্ভূত খেলাধুলা, সামাজিক যোগাযোগেও সময় ব্যয় করছে অনেকেই।

করোনায় শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র (বাশিস) সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এরপরও শিক্ষকরা অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। বেতনভাতা না পেয়ে অনেকেই পেশা বদল করেছে; শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। আবার অনেক শিক্ষকের স্মার্ট ফোন সেট নেই; ইন্টারনেট সংযোগের ব্যয় বহনের সক্ষমতা নেই। শহরের শিক্ষার্থীরা ক্রমশ: অনলাইন শিক্ষায় অভ্যস্ত হলেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত। কারণ গ্রামের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই স্মার্ট ফোন সেট নেই; তা কেনা ও ইন্টারনেট সংযোগ লাগানোর আর্থিক সক্ষমতাও নেই। সরকারের উচিৎ বিনামূল্যে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন সেট দেয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া।’

টিউশন ফি ৫০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি :

করোনা পরিস্থিতিতে সব বেসরকারি স্কুল-কলেজে বর্তমান ২০২০ শিক্ষাবর্ষে টিউশন ফি কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে দ্রুত পরিপত্র জারি করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তার জন্য সরকারের নির্দেশে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে স্কুল-কলেজ খুলে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। করোনায় লগডাউনে দেশের অন্যান্য মানুষের মতো শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন; কেউ মাসিক বেতন অর্ধেক পাচ্ছেন। কারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে চরম দুর্বিসহ দিন কাটাতে হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে অনেক অভিভাবক বাসা ছেড়ে দিয়ে সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। এগুলো বিবেচনায় না নিয়ে অনেক বেসরকারি স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর অমানবিক আচরণ করছেন। শ্রেণী কার্যক্রম না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকরা টিউশন ফি আদায় করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। এসব কারণে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে দেশের সব স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীর টিউশন ফি কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন অভিভাবকরা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে টিউশন ফি আদায় করা সংক্রান্ত বিষয়ে দ্রুত পরিপত্র জারি করার দাবি জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025589466094971