করোনায় মাদরাসায় শিক্ষার্থী বেড়েছে, কমেছে স্কুলে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাকালে দেড় বছর বন্ধ ছিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছর সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললেও দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত রয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি উপস্থিত। গত বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হারও কমেছে। তবে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসায় ভর্তির হার। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের (ব্র্যাক আইইডি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ব্র্যাক সেন্টারে কভিড মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকাকালে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। 

শিখন ঘাটতির ওপর পরিচালিত গবেষণাটি গত বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এতে শহর ও গ্রামের ১০০ উপজেলার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৪ হাজার ৬৮৯ শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালিকাভুক্তির (ভর্তি) হার ২০২০ সালে ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল, যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রাথমিকে ২০২০ সালে ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ২০২১ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর আগে প্রাক-প্রাথমিকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ভর্তির হার বেশি থাকলেও মহামারী শুরু হওয়ার পর সেই হার কমে গেছে। পুনরায় স্কুল চালু হওয়ার পর প্রাথমিকে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই স্তরে গড়ে ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে উপস্থিতির হার ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরই বেশি। এর মধ্যে গ্রামে মেয়ে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও শহরে এই হার ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

অপরদিকে বিভিন্ন ধরনের মাদরাসা যেমন কওমি, হাফেজি, নূরানী মাদ্রাসায় ২০২০ সালে ৫ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশু ভর্তির হার ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২১ সালে সেই হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ৬ থেকে ১০ বছরের শিক্ষার্থীদের ২০২০ সালে ভর্তির হার ছিল ১১ শতাংশ, ২০২১ সালে সেই হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষার্থী বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। 

প্রাথমিকে স্কুলে না যাওয়া শিক্ষার্থীদের ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ বলেছে, এখনো আগের মতো স্কুল খোলেনি। ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ গৃহকর্মে, শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ বা ভয় ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, বাল্যবিয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, কাজ খুঁজছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, স্বাস্থ্যগত সমস্যা ২ দশমিক ৮ শতাংশ, কওমি মাদরাসায় চলে গেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও অন্যান্য কারণে স্কুলে যাচ্ছে না ৪ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী। 

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনাকালে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে ২০২১ সালে ৭ দশমিক ১ শতাংশ ফিচার ফোন, ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ স্মার্টফোন, ৮ দশমিক ৮ শতাংশ টেলিভিশন, ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ ইন্টারনেট ও ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করেছে। 

ব্র্যাক আইইডির কর্মসূচি প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, ‘পড়াশোনার ক্ষতি একটি বাস্তবতা। প্রশ্ন হচ্ছে, কত দ্রুত আমরা সেটা পুনরুদ্ধার করতে পারি। এটি সব শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের মাধ্যমে শুরু করা যেতে পারে বা তাদের শ্রেণিবিন্যাস করে পুনরুদ্ধারের কৌশলগুলো প্রস্তুত করা যেতে পারে। নিয়মিত শিক্ষকদের কেন্দ্রে রেখে অভিভাবক, সহকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং অস্থায়ী শিক্ষকদের ব্যবহার করা যেতে পারে। যা শিক্ষার্থীদের ফলোআপ মূল্যায়ন অগ্রগতি বুঝতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘মহামারী চলাকালে স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে শিক্ষার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঝরে পড়া এবং যাদের ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব শিশুকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে মেয়ে, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্র্যাক ব্রিজ স্কুলের মডেল এবং ব্র্যাকের শিক্ষা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের করা গবেষণা প্রতিবেদনের ফল শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে নীতিনির্ধারক এবং অনুশীলনকারীদের উপকার করবে।’

কানাডার সাইমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসির প্রফেসর জন রিচার্ডস ব্রিজ মডেলটি ওই শিশুদের লক্ষ্য করে বানানো হয়েছে, যারা সরকারি স্কুল থেকে ঝরে গেছে বা আর কখনো ভর্তি হয়নি। বেশিরভাগ শিশুই নিম্ন আয়ের পরিবারের। বর্তমানে, প্রায় ২০ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে না। ব্রিজ স্কুলগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলো যে তারা বেশিরভাগ সরকারি স্কুলের তুলনায় ভালো পাঠদান ও গণিতে ভালো ফল করেছে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মো. মুহিবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. স্টিফেন হেইনম্যান, ইউএস এইডের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048749446868896