কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করা সেই জাল সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

অহিদুল ইসলাম, নওগাঁ প্রতিনিধি |

নওগাঁর মান্দা থানা আদর্শ মহিলা স্কুল এণ্ড কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক পাপিয়া খান জাল সনদে চাকরি নিয়েছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। উচ্চতর স্কেল পাওয়ার জন্য তৎপরতাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়াতেই জালসনদে চাকরির বিষয়টি ফাঁস হয়েছে। এদিকে জালসনদকে বৈধ করতেও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরজাল করেছেন ভুয়া সনদধারী শিক্ষক পাপিয়া।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে আসলে 'কর্মকর্তাদের নকল স্বাক্ষরে জালসনদ বৈধ করার চেষ্টা শিক্ষকের' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর পাপিয়ার সনদটি জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। জাল সনদে চাকরি, তথ্য গোপন করে এমপিও বাবদ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সনদ বৈধ করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। যার মামলা নং-১৮/২০২০ জি আর নং ৫৩৫/২০২০ ধারা ৪০৬,৪২০,৪৬৮ ও ৪৭১।অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেন এবং মান্দা থানার ওসি শাহিনুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, মান্দা থানা আদর্শ স্কুল এণ্ড কলেজের শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক পাপিয়া খান জাল শিক্ষক নিবন্ধের সনদ দিয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট নিয়োগ নেন। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এমপিওভুক্ত হন। এ সময়ে এমপিও বাবদ অবৈধভাবে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১৭ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন জাল সনদধারী শিক্ষক। 

প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সম্প্রতি পাপিয়ার এমপিওভুক্তির ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাই উচ্চতর স্কেল নেয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু পাপিয়ার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ৩০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এনটিআরসিএতে সনদটি যাচাইয়ের জন্য পাঠান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শরীরচর্চা শিক্ষক পাপিয়া খানের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল বলে ১ম দফায় যাচাই প্রতিবেদন দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।

এরপর জালসনদের ওপর একজন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষর ও ভুয়া সিল দিয়ে শিক্ষক পাপিয়া তার সনদটি বৈধ করার অপচেষ্টা চালান। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দেয়া এক লিখিত আবেদনে পাপিয়া দাবি করেন, তার সনদটি ভেরিফাই করে দিয়েছেন এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা। এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলামের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে জাল সনদরে একটি কপি ভ্যারিফাইড বলে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জামা দেন।

কিন্তু দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম তার স্বাক্ষরটি জাল করা হয়েছে বলে জানান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এভাবে ফটোকপিও ওপর সিল দিয়ে এনটিআরসিএ কখনই নিবন্ধন সনদ ভেরিফাই করে না। সনদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ভুলও হয়না। যদিও ভুল হয় সে ক্ষেত্রে একই স্মারকে প্রতিস্থাপিত সনদ যাচাই প্রতিবেদন দেয়া হয় এবং তা ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়। এখানে তিনি ভুয়া সিল ও জালস্বাক্ষর ব্যাবহার করেছেন।      

তিনি আরও জানান, সারাদশের জাল সনদধারী শিক্ষকরা বেপরেোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সনদ বৈধ করতে প্রায়ই কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

মান্দা থানা আদর্শ মহিলা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, প্রথমে শরীরচর্চা শিক্ষক পাপিয়া খানের নিবন্ধন সনদ ভুয়া সংক্রান্ত বিষয়টি এনটিআরসিএ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পাঠানো যাচাই রিপোর্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হই। তারপর ঐ শিক্ষক গত ২৮ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্যারের স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদ আমার অফিসে জমা দেন এবং বলেন তাজুল ইসলাম স্যার আমার সনদটি যাচাই করে সঠিক বলে সনদে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। সেই সনদটি সঠিক নয় বলে আমার সন্দেহ হলে আমি এনটিসআরসিএকে সনদটি আবার যাচাইয়ের আবেদন করি। তার প্রেক্ষিতে গত ৮ অক্টোবর আবারও কর্তৃপক্ষ সনদটি সঠিক নয় বলে জানান। একইসাথে মামলা দায়ের করতে বলেছেন। জাল নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক পাপিয়া খানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  শাহিনুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মান্দা আদর্শ মহিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031569004058838