কর্মচারী আত্তীকরণ আইনের খসড়া চূড়ান্ত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরিকে আরও আকর্ষণীয় করতে কর্মচারী আত্তীকরণ আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এতে সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও বিলুপ্তির কারণে উদ্বৃত্ত হয়ে পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তীকরণের সুযোগ তৈরি হবে । এ জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সর্বশেষ পদের সমপদে এবং একই বেতন স্কেলে উদ্বৃত্ত কর্মচারীকে আন্তীকরণ করা যাবে । তবে ২৫ বছর চাকরির পর কেউ অবসরে গেলে তিনি এই সুযোগ পাবেন না। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের  উদ্বৃত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০২৩-এর খসড়ায় এই বিধান রাখা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা খসড়া শীঘ্রই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে। সংবিধিবদ্ধ কর্মচারীর সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৮ জন।

তাদেরসহ জনবল কাঠামো অনুযায়ী দেশে মোট সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর জন্য 'সরকারি কর্মচারী আইন'-এর অধীনে আত্তীকরণ বিধিমালা রয়েছে।

সূত্র বলছে, নতুন আইন কার্যকর হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আত্তীকরণের সুযোগ তৈরি হবে।

জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, আইন না থাকায় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণ করা যাচ্ছে না। প্রায় এক, বছর ধরে আইনের খসড়া যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে। 
অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই খসড়াটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর পদ প্রশাসনিক পুনর্গঠন, জনবল যৌক্তিকীকরণ বা অন্য কোনো কারণে বিলুপ্ত হলে ওই কর্মচারীকে উদ্বৃত ঘোষণা করতে পারবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়, সংবিধিবদ্ধ সরকারি, কর্তৃপক্ষ,  স্বশাসিত, সংস্থা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। ঘোষণার এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আন্তীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই উদ্বৃত্ত হওয়ার আগের স্কেলের সমস্কেলভুক্ত পদে আত্তীকরণ করতে হবে। 

এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের  সম্মতি লাগবে। যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মচারীরা অগ্রাধিকার পাবেন । যে কোনো মন্তণালয়, বিভাগ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তীকরণের ক্ষমতা দিতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় । আত্তীকৃত পদে যোগদানের আগে তারা যে হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সর্বশেষ বেতনভাতা গ্রহণ করেছেন, সেই আফিস থেকেই বেতন, ভাতা এবং অবসর সুবিধাদি তুলবেন। এ জন্য সুপারনিউমারারি পদ' সৃজন করা হবে ।

আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য তার আগের  চাকরির সম্পূর্ণ সময়কাল গণনা করা হবে। যে  প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করা হবে, সেই প্রতিষ্ঠানের বিধি-প্রবিধি অনুযায়ী বেতন, ভাতা ও অবসর সুবিধা পাবেন। যে কর্মচারী যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত, সেই মন্ত্রণালয় তাদের উদ্বৃত্ত করবে। উদ্বৃত্তকরণের তারিখ থেকে আত্তীকরণের আগ পর্যন্ত তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লাগবে ন।

খসড়া অনুযায়ী, সরকারের, ৫০ শতাংশের অধিক অর্থায়নে পরিচালিত কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও আত্তীকররণের সুবিধা পাবেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরিকালের ৫০ শতাংশ আত্তীকৃত সরকারি পদের জ্যেষ্ঠতার জন্য গণনা করা হবে। তবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে অপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে পূর্ব পদের সম্পূর্ণ চাকরিকাল আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, ছুটি, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য গণনা করা হবে । ২৫ বছর চাকরি করার পর কেনো কর্মচারী উদ্বৃত্ত হলে এবং তিনি পুর্ণ অবসরসুবিধা গ্রহণ করলে পুনরায় সরকারি কোনো কার্যালয়ে আত্তীকরণের জন্য বিবেচিত হবেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শের প্রয়োজন হবে না।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, দেশের কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে এ আইনের অধীনে সম্পন্ন কোনো কাজ বা জারি করা কোনো আদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। 

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিজেএমসির অধীনে একসময় ৭০টি পাটকল ছিল । কিন্ত অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে লোকসানে একের পর এক পাটকল বন্ধ হতে থাকে । সর্বশেষ ২৫টি পাটকল বন্ধ হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১ জুলাই। বিজিএমসির পুঞ্জীভূত  লোকসানের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরনের (বিসিআইসি)শ্রমিক  ফেডারেশনের সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম কামালুদ্দিন বলেন,  এ সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ । এ আইন না থাকায় বিজেএম্সিসহ বিভিন্ন সংস্থায় নানা আইনি জটিলতা চলছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রেড ইভনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, “নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো । আগো এ বিষয়ে কোনো আইন ছিল না। সরকার আইন করছে ভালো কথা। তবে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সমপদ ও সমস্কেল হতে হবে। অন্যথায় ঝামেলা বাড়বে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024821758270264