সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
সোমবার সকালে সারা দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। এ কর্মবিরতির সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকের অভ্যন্তরে শিক্ষকদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। একই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেন।
এর আগে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। তাদের দাবিগুলো হলো, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
দৈনিক আমাদের বার্তা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কার্যক্রমও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে জরুরি চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ দিকে লাইব্রেরি বন্ধ করায় প্রধান প্রবেশপথ ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। সর্বাত্মক সকল প্রকার প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাজ বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনে সর্বাত্মকতা বজায় রাখারি জন্য এটা করা হয়েছে। ছাত্রদের জন্যই এ আন্দোলন, আগামীতে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হবেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনের জন্য আমাদের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা বারবার বলেছি, কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য করবেন না। আমাকে প্রশ্ন না করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করুন, কেনো ছাত্ররা লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারছেন না, শিক্ষকদের লাইব্রেরি না খোলার মতো অবস্থায় যেতে হলো।
আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সকল কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দূরদূরান্ত থেকে এসেও অনেকে সেবা পাননি। ‘কর্মবিরতি’ পোস্টার লাগিয়ে কিছু কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কিছু কক্ষে লোকজন থাকলেও তারা কোনো সেবা দিচ্ছেন না।
এদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মোতালেব বলেন, আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। তবে জরুরি সব সেবা চালু রয়েছে। শুধু দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীর অতীব জরুরি প্রয়োজন হলে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ যাবতীয় সেবা দেওয়া হবে।
এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধিরা একই ধরনের কর্মসূচির সংবাদ পাঠিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করবে সরকার।