এবারের কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কলেজ স্কয়ারে শুরু হলো ১০ম বাংলাদেশ বইমেলা।
শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশের প্রবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং পশ্চিমবঙ্গের লোকনৃত্য রণপা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধন হয়।
প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে। মেলা চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ বইমেলার সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের উপ-হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রাত্য বসু বলেন, বাংলাদেশ বইমেলার সূচনা মঞ্চ আজ দুই বাংলার মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। দুই বাংলাকে জুড়ে রেখেছে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি এবং অবশ্যই বই।যা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকানো যাবে না।
বইমেলার স্টল ঘুরে দেখেন এবং প্রকাশক ও পাঠকদের সঙ্গে কথা বলেনদীপু মনি। তিনি বলেন, যেকোনো মেলাই আনন্দের। আর সেটা যদি বইমেলা হয় তা আরও আনন্দের। বইয়ের মতো ভালো বন্ধু হয় না।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার জয় করে বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামে একটি দেশ সৃষ্টি করে বাংলাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়েছে তা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশ বইমেলার মধ্য দিয়ে সেই আত্মীয়তার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে এই আশা করি।
এবারের কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উদ্যোগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বাংলাদেশের সহযোগিতায় কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত ১০ দিনব্যাপী এই মেলায় ৭৭টি বইয়ের স্টলে বাংলাদেশের সৃজনশীল বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশিত বইয়ের সম্ভার থাকছে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার, কবিতাপাঠ এবং পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের শিল্পীদের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে।
কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলায় অংশ নিয়েছে প্রান্ত প্রকাশন। বিজ্ঞানভিত্তিক, কৃষিভিত্তিক এবং গবেষণামূলক বই প্রকাশ করে এই সংস্থা।
প্রান্ত প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার আমিনুর রহমান বলেন, আমি আগেও কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছি। ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে।
উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়ি থেকে বাংলাদেশ বইমেলায় এসেছেন সুমিতা সরকার। তিনি বলেন, খুবই ভালো লাগছে। এভাবে স্টলে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের প্রিয় লেখক লেখিকাদের বই কিনতে পারছি, এটা দারুণ পাওয়া।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বইমেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল কলকাতার গগনেন্দ্র সংগ্রহশালায়। পর পর ৩ বছর সেখানে বইমেলা চলার পর সেটি রবীন্দ্র সদনের খোলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্র সদনের কাছে মোহরকুঞ্জে এই মেলা স্থানান্তরিত হয়। সেখানেও পর পর ৩ বছর বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। গত দুবছর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। এ বছর আবার কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা হচ্ছে। তবে মোহরকুঞ্জের পরিবর্তে এবার কলকাতার কলেজ স্কয়ারে মেলা হচ্ছে।