আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বাড়াতে হবে রাজস্ব আদায়। আর রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন নতুন খাত আসছে ভ্যাটের আওতায়। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা উপকরণ কলম– কিছুই বাদ যাচ্ছে না ভ্যাটের জাল থেকে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে কলমের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শুক্রবার (২৬ মে) কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আলী ইব্রাহিম।
প্রতিবছরের বাজেটে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কয়েকটি খাতের মধ্যে শিক্ষা খাত অন্যতম। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বলপয়েন্ট কলমের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মৌলিক উপকরণের ওপর ভ্যাট আরোপ করা যুক্তিসংগত নয়। এতে শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর চাপ পড়বে বলে মনে করেন তারা। বাজেট সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার পরামর্শ তাদের। এদিকে, বাজেটের বেশ আগে থেকেই শিক্ষা উপকরণের লাগামহীন দামে বেকায়দায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তার ওপর আবারও দাম বাড়লে বেকায়দায় পড়বেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সংসারের খরচ মেটানোই দায়। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানদের শিক্ষার পেছনে টাকা ব্যয় করতে হয়। আবারও মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াই কষ্টকর হয়ে যাবে। হয়তো খাওয়ার খরচ থেকে কাটছাঁট করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার পরামর্শ তাদের।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা বলছেন, বাজেটের আগে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। তবে বাজেটে এমন কিছু করা হবে না, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর কোনো চাপ পড়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বলপেন শিক্ষার একটি মৌলিক উপকরণ। এগুলো যত সুলভ মূল্যে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় ততই ভালো। কিন্তু শিক্ষার এ উপকরণে ভ্যাট আরোপ করা যৌক্তিক নয়। কারণ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীর জন্য এগুলো ন্যূনতম উপকরণ। এগুলো ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হবে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের এমনিতেই শিক্ষার বাজেট অনেক কম। তারপর যদি আবার এগুলোর মূল্যবৃদ্ধি ঘটে তাহলে করোনা মহামারি, বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি—এসব মিলে ছেলেমেয়েদের পরিবারের ওপর একটা বড় ধরনের চাপ পড়বে। আমি মনে করি, সরকারের যারা বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা এ বিষয়গুলো ব্যবহারিকভাবে বিবেচনা করবেন এবং সেভাবে তারা সুপারিশ করবেন বলেও পরামর্শ এ শিক্ষাবিদের।
এনবিআর সূত্র জানায়, কলম ছাড়াও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যেরও ভ্যাট হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অ্যালুমিনিয়াম কিচেনওয়্যার পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা আছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ হার সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে পলিপ্রোপাইলাইন স্ট্যাপল ফাইবারে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর সব ধরনের টিস্যু পেপারের ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয় সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।