ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। কলে যখন ধান ভাঙানো হয়, তখন চাল হয় মসৃণ। চাল থেকে ওপরের আবরণ বের হয়ে যাওয়ায় তা হয় চকচকে, পলিশড। অথচ একসময় ঢেঁকিছাঁটা চালেরই চল ছিল। কলে ভাঙানো চাল সভ্যতার নতুন সংযোজন।
ঢেঁকিছাঁটা চালের শ্রেষ্ঠত্ব
কলে ভাঙলে চাল থেকে বের হয়ে যায় শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্য উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-বি, খনিজ লবণ, বায়োটিন, আমিষ, চর্বি,
ফাইটোকেমিক্যাল ও ফাইবার। চলে যায় আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ই। কলে ভাঙানো চালের ভাত খেলে এসব উপাদানের অভাব হওয়া স্বাভাবিক। এক কাপ ঢেঁকিছাঁটা চালে ৭৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এর বিপরীতে কলে ভাঙানো চালে থাকে মোটে ১৯ মিলিগ্রাম।ঢেঁকিছাঁটা চালে পটাশিয়াম থাকে ১৭৪ মিলিগ্রাম, আর কলের চালে ৫৫ মিলিগ্রাম। ঢেঁকিছাঁটা চালে তিন গ্রাম ফাইবারের বিপরীতে কলের চালে ফাইবার নেই বললেই চলে। এক কাপ ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাতে দৈনন্দিন চাহিদার ৮০ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ থাকে। ম্যাঙ্গানিজ আমাদের স্নায়ু ও প্রজননতন্ত্রের কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই চালে সেলেনিয়াম নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদ্যমান; যা হৃদরোগ, কর্কট রোগ ও বাতের ঝুঁকি কমায়। তাই বলা যায়, কলের চালের তুলনায় ঢেঁকিছাঁটা চাল শ্রেষ্ঠ।
কলে ভাঙানো চালে ডায়াবেটিস
কলে ভাঙানো চালের ভাতের সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের যোগসূত্র রয়েছে। ২০২০ সালে ডায়াবেটিক কেয়ার নামে বিখ্যাত জার্নালের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ২১টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, কলের চালের ভাত ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার পর রক্তে হুহু করে বেড়ে যায় চিনির মাত্রা। সঙ্গে বেড়ে যায় ইনসুলিনের চাহিদা। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে আমাদের অগ্ন্যাশয় হয়ে পড়ে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত। সামাল দিতে পারে না অতিরিক্ত চিনির মাত্রা।
তখন শরীরে দানা বাঁধে ডায়াবেটিস। ঢেঁকিছাঁটা চালে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।মনে রাখা দরকার, কোনো খাদ্য এককভাবে শরীর-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভাঙতে বা গড়তে পারে না। আমাদের শর্করার প্রধান উৎস ভাত। তবে এই ভাত থেকে কী করে আরও বেশি স্বাস্থ্যরক্ষার উপযোগী উপাদান পেতে পারি, সেটা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।