কলেজ পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষায় ছাত্র কমছে

অধ্যাপক মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

আধুনিক শিক্ষাক্রমে কলেজ শিক্ষার বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় বলা হয় ‘নো কলেজ, নো নলেজ’। প্লেটো বলেছেন ‘দেহ ও আত্মার পূর্ণতা সাধনের প্রয়াসকে বলে শিক্ষা’। রুশোর ভাষায় ‘শিক্ষা হচ্ছে সুঅভ্যাস গড়ে তোলা’। 

কলেজে ইসলাম শিক্ষা পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে অনুকরণীয় মুসলমানের মতো জীবনযাপনের জন্য তৈরি করা হয়। অবাধ্য যৌবনের দূরন্তপনায় যেনো নতুন প্রজন্ম অনাচার, অপরাধ ও মাদকের ছোবলে শেষ না হয়ে যায়, এজন্যই প্রয়োজন ইসলাম শিক্ষা। এতে ইসলামের বিশ্বাস ও প্রায়োগিকতা এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কিত বিষয় শিক্ষার্থী আত্মস্থ করতে পারেন। ঈমান-আমল ও ইবাদত, আখলাকের সুস্পষ্ট ধারণা সহজ-সাধারণ সিলেবাসে শিক্ষা দিলে শিক্ষার্থী তার পরিবার, সমাজ ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে সহজেই ভালমন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারেন।

এবিষয়গুলোর সঙ্গে বিশ্বাস ও কর্মের সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যায় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইসলাম শিক্ষার সিলেবাস এমনভাবে প্রণীত হয়েছে, যেনো একজন শিক্ষার্থী তওহিদ, রিসালাত, আমল, ইবাদত ও আখলাক সম্পর্কে অনুশীলনের দক্ষতা অর্জন করে। এতে শিক্ষার্থীর নৈতিকভিত্তি দৃঢ় হয়।

কলেজ পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষা সম্পর্কে সর্বসাধারণের ধারণা যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। অনেকে মনে করেন, এটা আরবি ভাষা-সাহিত্যের মতো কিছু, কারো কারো কাছে ইসলাম শিক্ষা হয়তো ইসলামি ইতিহাসের মতো মুখস্ত নির্ভর বিষয়। আসলে ইসলাম শিক্ষা এমন কিছুই নয়। বরং ইসলাম শিক্ষা হলো সহজে প্রকৃত ইসলাম বোঝার একটি অনন্য উপায় এবং আদর্শ মানুষ তথা মুসলমান হবার মাধ্যম। 

আমরা কলেজ পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষা পড়বার সুফল জানি কি? অনেকের ধারণা ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে আরবি জানতে হয়, পড়তে হয় মাদরাসায়। অথচ কলেজে ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় ইসলামের মৌলিক বিষয়াদিসহ পবিত্র কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস ও ফিকহশাস্ত্র সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। এ শিক্ষা আলিম হবার বিকল্প উপায় নয় বরং আদর্শ মুসলমান হবার সহজ সুযোগ।

বাংলাদেশে ইসলাম শিক্ষার সোনালি অতীত রয়েছে। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে শামসুল উলামা অধ্যক্ষ আবু নসর ওয়াহিদের নেতৃত্বাধীন মোহমেডান এডুকেশন অ্যাডভাইজারি কমিটি ওল্ড স্কিম ও নিউ স্কিম দু’ধরনের মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতির ধারণা দেন। এই নিউ স্কিম পদ্ধতিতে জুনিয়র ও সিনিয়র দু’ধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই মুসলমানদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল কলেজ সৃষ্টি হয়। ঐসব স্কুল কলেজে আরবি ও ইসলাম শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিলো। তখন আরবি ও ইসলাম শিক্ষাকে একত্রে বলা হতো ‘দ্বিনিয়াত’ পরবর্তীতে ‘ইসলামিয়াত’। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বলা হতো ‘অ্যারাবিক এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ’, যা পরবর্তীতে আরবি এবং ইসলামিক স্টাডিজ দু’টি আলাদা বিষয় হয়। স্কুল কলেজ পর্যায়ে বলা হতো ‘ইসলাম শিক্ষা’। এখন স্কুলে বিষয়টির নাম ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’।

আমি কলেজে প্রায় বত্রিশ বছর ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়ে অধ্যাপনা করচ্ছি। কিন্তু ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে চালু হওয়া বিষয় কাঠামো নিয়ে শঙ্কায় আছি, তবে কি আস্তে আস্তে বিষয়টি বিলুপ্ত হয়ে যাবে? 

এখন ইসলাম শিক্ষার মতো তত্ত্বীয় বিষয়ের চেয়ে ব্যবহারিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর ঝোঁক, শুধু বেশি নম্বরের আশায়। অন্যদিকে যে বিষয়গুলো মানবিক শাখার জন্য আবশ্যিক তার প্রায় সব গুলোই আবার ঐচ্ছিক হিসেবেও নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে মানবিক শাখার যারা কম মেধাবী তাদের পক্ষে সহজ বিষয় নিয়ে সহজে ভাল ফলাফলের পথও থাকলো কি? 

ইসলাম শিক্ষা স্কুলে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়বার পর, কলেজে সীমিত সুযোগের ফলে উচ্চশিক্ষায়ও বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে অস্তিত্ব সংকট। 

২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বিদ্যমান পদ্ধতির সংস্কার করে নির্দেশনা জারির জন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি। কেননা, নৈতিকশিক্ষার উন্নতি এবং ধর্মের নামে অপশিক্ষা রোধে ইসলাম শিক্ষার বিকল্প নেই। কেনোনা, কলেজে ইসলাম শিক্ষা, আলোকিত আগামীর দীক্ষা।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ,গাজীপুর 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052881240844727