এসএসসিতে ভালো ফল করেও তারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। ৫০/৬০ নম্বরের পরীক্ষায় কেউ ২ পেয়েছেন, কেউবা শূন্য। কেউ বা আবার উত্তর না লিখে অশ্লীল বাক্য লিখেছেন। এ চিত্র একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায়। গত মাসে অনুষ্ঠিত চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়। কলেজগুলো : নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরি। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুধু চার্চ পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশের অন্যসব সব কলেজে এসএসসির ফলের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি করা তালিকায় শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে করা হচ্ছে। ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়।
নটর ডেম ও হলিক্রস কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হয়েছে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। অপরদিকে সেন্ট যোসেফে লিখিত কিন্তু খুবই সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ না পেয়ে এসব কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য কেউ আবেদন করতে পারেনি। বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি নেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসির সিলেবাস অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন আসে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রায় সবাই কোচিং করেছেন।
জানা যায়, নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে ২০ হাজারের বেশি ভর্তিচ্ছু। সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট আবেদনকারী ছিলেন ৮ হাজারের মতো। হলিক্রসেও প্রায় ২০ হাজার ছাত্রী ভর্তির আবেদন করেছিলেন। আর সেন্ট গ্রেগরিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৫ হাজারের মতো।
কলেজগুলোর একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রত্যাশা অনেক থাকলেও তাদের একটা বড় অংশ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অনেকে খুব কম নম্বর পেয়েছেন। এমনকি শূন্যও।
নটর ডেম কলেজের একজন শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এমসিকিউ ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। টেলিভিশন ও ফেসবুকে নাম ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রচারিত অনেক স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণরা আমাদের এখানে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছে।
সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর একটি প্যারাগ্রাফ লিখতে বলা হয়েছিলো। উত্তরে অনেক ভর্তি পরীক্ষার্থী লিখেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, সারাদেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তাই অতি দ্রুত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বন্ধ করতে হবে।’
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৯টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার পরীক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ মোট ১১টি বোর্ডে জিপিএ ফাইভের সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার। সাধারণ ধারার স্কুল থেকে উত্তীর্ণ প্রায় সব শিক্ষার্থীর (ক্যাডেট বাদে) লক্ষ্য থাকে নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফসহ চার্চ পরিচালিত এই কলেজগুলোতে ভর্তির। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চারটি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জিপিএ ফাইভধারী এবং উল্লেখযোগ্য অংশ ফেল করেছে। যদিও এই কলেজগুলো সম্মিলিতভাবে পাস-ফেলের কোনো তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করেনি। কলেজগুলোর একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে পাসফেল ও উদ্ভট সব উত্তর লেখার তথ্য জানা গেছে।
কেন এমন হয়েছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নটর ডেম কলেজের একজন শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বাণিজ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ যে কোনো মূল্যে তাদের শিক্ষার্থীদের জিপিএ ফাইভ পাওয়া নিশ্চিত করে। সিলেবাস সম্পূর্ণ করায় না। ফলে একটা ঘাটতি নিয়ে তারা এসএসসি পর্যায় শেষ করে। বুয়েট-মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায়ও এসব বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খুব একটা সুযোগ পায় না।