কলেজছাত্র সিফাতকে হত্যার আগে গর্ত খুঁড়ে রাখে প্রতিবেশী মতি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

গলা টিপে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয় কলেজছাত্র ফাহিদ হাসান সিফাতকে (১৮)। পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে সিফাতের ফোন থেকেই তার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় প্রতিবেশী খুনি মতিউর রহমান মতি। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে একাই হত্যার কথা স্বীকার করে সে। তার দেওয়া তথ্যে গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশের একটি ক্ষেত থেকে মাটি খুঁড়ে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করে র‌্যাব। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে সিফাত। দিনাজপুর আদর্শ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি।

র‌্যাব, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিকট প্রতিবেশী এবং সম্পর্কে চাচাতো ভাই ছিল নিহত সিফাত এবং খুনি মতিউর রহমান মতি। উভয় পরিবারের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়া হতো। পারিবারিক এ বিরোধের জেরে ৪ জানুয়ারি রাতে সিফাতকে বাড়ির পাশের নির্জন একটি ক্ষেতে ডেকে নেয় সমবয়সী মতি। হত্যার আগেই ওই ক্ষেতে গর্ত করে রাখা ছিল। ক্ষেতের আইলে বসে গলা টিপে হত্যার পর সেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয় সিফাতকে। সন্ধ্যার পর ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে বের হয়ে গভীর রাতেও বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। কোথাও না পেয়ে পরদিন ৫ জানুয়ারি আটোয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সিফাতের বাবা সফিকুল ইসলাম। এরপর পুলিশসহ পরিবারের লোকজন সিফাতকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে অভিযুক্ত খুনি মতিও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সিফাতকে খুঁজতে থাকে। ওইদিন সন্ধ্যায় সিফাতের ফোন থেকেই তার বাবাকে ফোন দিয়ে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একটি নম্বরে ৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

জিডির পর পুলিশ কোনো সুরাহা করতে না পারায় শুক্রবার নীলফামারী র‌্যাব-১৩-এ অভিযোগ করেন সিফাতের বাবা। অভিযোগের ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধান সন্দেহভাজন মতিউর রহমানসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে র‌্যাব। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে একাই তাকে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করে মতি। 

গতকাল বিকেলে মতিসহ তার বাবা মখলেছার রহমান, মা ময়না বেগম এবং চাচাতো ভাই লিমনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।

নীলফামারী র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ঠান্ডা মাথায় সিফাতকে ডেকে বাড়ির পাশের ক্ষেতের আইলে বসে গলা টিপে হত্যা করা হয়। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা খালে তাকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। অভিযোগ পেয়ে ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা হত্যকারী গ্রেপ্তারসহ মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ ঘটনার সঙ্গে সে একাই, নাকি অন্য কেউ জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে।


নিহত সিফাতের বাবা সফিকুল ইসলাম বলেন, মতিসহ তার ভাই উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের। তারা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের গালাগাল করত। তাদের পরিবারের কেউ ভালো না। তারা আমার নিরপরাধ ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

আটোয়ারী থানার ওসি ইজার উদ্দিন বলেন, প্রধান অভিযুক্ত মতিউর রহমান মতিসহ তার বাবা, মা ও চাচাতো ভাইকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। সিফাতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের - dainik shiksha দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন - dainik shiksha নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর - dainik shiksha জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক - dainik shiksha নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022590160369873