একাদশ শ্রেণিতে পুরো ভর্তি প্রক্রিয়াটাই ইন্টারনেট নির্ভর। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধীদের জালাও-পোড়াওয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা সপ্তাহখানেক বন্ধ। ফলে অনেকেই আপডেট জানতে পারছেন না। এছাড়াও ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে মনোনয়ন পেয়েও অনেকে চালাকি করে ভর্তির নিশ্চায়ন না করে অবৈধ পথে কাঙিক্ষত কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে ভিড় জমাচ্ছেন। সব মিলিয়ে অতি চালাক ভর্তিচ্ছুক ও তাদের অভিভাবকদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বোর্ড কর্মকর্তারা । বিশেষ করে চেয়ারম্যান দপ্তর ও কলেজ শাখা এদের সামলাতে গলদঘর্ম হচ্ছে। এমন চিত্রই দেখা গেছে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার।
মাসহ ঢাকাবোর্ডে এসেছিলেন ঢাকার গুলশানের আরাফাত হোসেন ইয়াছিন। বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের কাছে আবেদন করেছেন নিশ্চায়ন প্রসঙ্গে। বুয়েটের একটি বিভাগের সহায়তায় অনলাইনে ভর্তির প্রথম ধাপে মনোনয়ন পাওয়া আরাফাত ভর্তির জন্য নিশ্চায়ন করেননি। এখন তৃতীয় ধাপের ভর্তি চলছে। ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট। কিন্তু নিজের ভুল সিদ্ধান্ত অথবা চালাকিতে ফেঁসে গিয়ে ভর্তি হতে না পারার টেনশন নিয়ে বোর্ডের বারান্দায় ঘুরছিলেন আরাফাত। তার বিনীত নিবেদন তাকে যেনো মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। বোর্ডের কলেজ শাখার কর্মকর্তাদের সাফ জবাব, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ভর্তি করা হচ্ছে। অবৈধপথে বা তদবির অথবা অযৌক্তিক আবদার মেনে ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। ধূর্তরা ধরা খাবেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ঢাকা বোর্ডে কথা হয় জুথি নামের আরেক ভর্তিচ্ছুকের সঙ্গে। জুথির ভাষায়, অনলাইনে ভর্তির আবেদনে ‘ভুলক্রমে’ প্রবাসী সন্তানের শিক্ষা কোটায় টিক দিয়েছেন। কিন্তু কোটার কাগজপত্র না থাকায় এখনও ভর্তি হতে পারেননি। তাই জুথির দাবি তাকে অনলাইন কোটা বাতিল করে নতুন করে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ দেয়া হোক।
জুথির দাবির সত্যতা যাচাইয়ে দেখা যায়, তিনি কোটা সংক্রান্ত ভুয়া কাগজ দিয়েছিলেন। যেগুলো গ্রহণযোগ্য হয়নি।
জুথি ও ইয়াছিনের মতো শতাধিক ভর্তিচ্ছুক ঢাকা বোর্ডের ভিড় করছেন। কারফিউয়ের ফাঁকে তারা বোর্ডে আসছেন গত দুদিন ধরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখার একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, অধিকাংশ ভর্তিচ্ছুই ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অসত্য বলছেন। চালাকি করছেন। ভর্তির আবেদন বিষয়ক তারা যেসব দাবি করছেন সেগুলো যাচাই করে দেখা যায় তাদের তথ্যই অসত্য। বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদনে ঢাকার ভর্তিচ্ছু হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন তিনি জানতেন না যে প্রথম মনোনয়ন পাওয়ার পর নিশ্চায়ন করতে হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কেউ সত্যিকার ও যৌক্তিক কোনো সমস্যায় পড়লে সেগুলোর সমাধান করে দেওয়া হয়। কিন্তু জাল বা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বা অন্য্যকোনোভাবে পছন্দের কলেজ পাওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে সারা দেশে স্থগিত থাকা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলেজ ভর্তি কার্যক্রম আগামী ২৮ জুলাই থেকে আবারো শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। আর ক্লাস শুরু হবে ৬ আগস্ট। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তির কার্যক্রম গতকাল ২৫ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিলো।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। ফল পুনঃনিরীক্ষণে আরো প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেন। তবে সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৫ লাখের মতো। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও একাদশ শ্রেণিতে ৮ লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকার কথা।