কর্মচারীর কাছ থেকে বডি ম্যাসাজ নিয়ে আলোচনায় আসা রাজধানীর উত্তরার নওয়াব হবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে থাকা শাহিনুর মিয়া প্রতিষ্ঠানের কেউ নন। তিনি প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেয়ার চেষ্টা করলেও তা হয়নি। পদত্যাগ করায় তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ কোনোটিই নন বলে উঠে এসেছে তদন্তে। শুধু তাই নয়, তিনি এমপিওর পাশাপাশি প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন, তদন্ত কমিটির মতে যা অবৈধ।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস, বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল না দেয়া, প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী দিয়ে বাসায় কাজ করানো, কলেজের দোকানের ভাড়া আত্মসাৎ, গভর্নিং বডি গঠন না করে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতি, শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত না করা, বেতন বন্ধ করে দেয়া, ভয় দেখানো, হয়রানি-নির্যাতন, শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ও অবৈধভাবে শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। এ পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়াকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলেন একজন অভিভাবক। দুদকের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেসব অভিযোগ তদন্ত শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সবুজবাগ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শামীম আরাকে। তিনি একটি কমিটি গঠন করে অভিযোগ তদন্ত করে গত ১৫ মে প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন। অধ্যক্ষ শামীম আরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আমি ডিজি স্যারকে সরাসরি বলে এসেছি।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়াকে শোকজ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর থেকে গত বৃহস্পতিবার শোকজ নোটিশ অবৈধ অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে তদন্ত কমিটি বরাতে বলা অধিদপ্তর বলছে, অভিযোগ ছিলো ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে তিনি প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সে বছরের আগস্ট মাসে গভর্নিং বডির সভায় পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয় ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয় মো. শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া নামের একজন প্রভাষককে। এর কয়েকদিন পর একটি পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। সে বছরের আগস্ট মাসে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শাহিনুর মিয়াকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। কিন্তু রেজুলেশনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মন্তব্য লেখেন, বিধিমোতাবেক না হওয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটি বলছে, তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এটি প্রতিয়মান হয় যে মো. শাহিনুর মিয়া যেমন প্রধান শিক্ষক নন, তেমন অধ্যক্ষও নন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়াকে নিয়োগ দেয়া হলো না বলে মন্তব্য করলেও তাকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন। এটি কিভাবে হলো জানতে চাইলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটিকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। শাহিনুর মিয়ার নিয়োগ বাতিল হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীর নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের কেনো নিয়োগ দেয়া হলো না সে বিষয়েও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কমিটিকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অধিদপ্তর আরো বলছে, অভিযোগ ছিলো শাহিনুর মিয়া এমপিও ছাড়াও প্রতিষ্ঠান তহবিল থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন ভাতা বাবদ মোট ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করছেন। এর মধ্যে ৭০ হাজার টাকা নগর ও অন্যান্য ভাতা বাবদ, ৫০ হাজার টাকা শিফটিং ভাতা ও ২০ হাজার টাকা কারিগরি ভাতা।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি বলছে, অবৈধভাবে ভাতা নেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। গত বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়াকে শোকজ নোটিশে কেনো তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষের কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়া গত শুক্রবার রাতে দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, সব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এক পেশে তদন্ত হয়েছে। অভিযোগও ষড়যন্ত্রমূলক। আমি শোকজের জবাবে সব উল্লেখ করে জমা দেবো। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে আসুন, এসে যাচাই বাছাই করে দেখুন।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।