কলেজের ভিতরে শ্রেণিকক্ষে নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল লাহোর। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তার পরই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে পাঞ্জাব গ্রুপ অব কলেজের ১০ নম্বর ক্যাম্পাসে। সেটি মেয়েদের কলেজ। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গোটা লাহোরের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজের পড়ুয়ারা সোমবার রাজপথের দখল নেয়। তাদের দাবি অবিলম্বে কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ অভিযুক্ত নিরাপত্তা রক্ষীকে গ্রেফতার করলেও পড়ুয়াদের দাবি অধ্যক্ষ ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অধ্যক্ষকে সারাদিন কলেজে আটকে রাখে ছাত্রীরা। গভীর রাতে পুলিশ অধ্যক্ষকে ঘেরাও মুক্ত করে। ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ২৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের বয়স ১৬ থেকে ২৫-এর মধ্যে। জানা গিয়েছে, ওই কলেজের ভিতরে ঢুকে আসবাবে আগুন ধরান বিক্ষোভকারীরা। স্লোগান দিতে থাকেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পরে বিষয়টি আরও উত্তপ্ত হয়। তারা রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায়। শারাজ আব্বাস নামে পাঞ্জাব কলেজের এক শিক্ষার্থী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘পাঞ্জাব পুলিশ নির্দয়ের মতো কলেজের ভিতরে ও বাইরের চত্বরে আমাদের উপরে নির্যাতন করেছে। ছাড় পায়নি মেয়েরাও।’
যদিও পুলিশের ব্যাখ্যা, তারা যা করেছে তা বাধ্যতই করেছে। সিনিয়র পুলিশ অফিসার ফয়জল কামরানের দাবি, শিক্ষার্থীরা চাইছিলেন কলেজের অধ্যক্ষকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হোক। পরিস্থিতি এমনদিকে গড়াচ্ছিল, ছাত্রছাত্রীরা অধ্যক্ষকে আঘাতও করতে পারতেন। অগত্যা পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। আহতদের মধ্যে লাহোর পুলিশের এসপি, ডিএসপি-রাও আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে সন্ত্রাস-দমন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, ধর্ষণের অভিযোগটি চেপে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেয়েটির সহপাঠীরা অভিযোগ জানাতে গেলে অধ্যক্ষ তা কানে তোলেননি। পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ডাকা হয়।
পাকিস্তানে কলেজে এখন নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি চলছে। লাহোরের শিক্ষা বিভাগ গোলমালের জেরে সব কলেজের ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। লাহোর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী। ওই প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আজমা বুখারি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম শরিফ প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। আক্রান্ত ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাঞ্জাব প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী রানা সিকান্দর হায়াত সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, আমরা ন্যায় নিশ্চিত করব। ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ কলেজের এক বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ সোমবার রাত পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনায় এফআইআর করেনি।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষ। পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ পেলে তখন অভিযোগ দায়ের করা হবে। কলেজের এই বক্তব্যই আগুনে ঘি ঢেলেছে লাহোরে। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের একটি প্রভাবশালী পরিবার ওই কলেজের মালিক। সারা দেশে তাদের কয়েকশে কলেজ আছে। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক মহলে তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী রানা হায়াত জানাচ্ছেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড় পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।
সূত্র : ডন