কারিগরি শিক্ষা প্রশাসনে অকারিগরিদের দৌরাত্ম্যে লাগাম টানার দাবি

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

একজন চিকিৎসককে বলা হলো তুমিতো নদী বা সমূদ্র পথের দূরত্ব মাপার একক জানো, তাহলে তুমি যাও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য। জীববিদ্যাবিশারদকে বলা হলো তুমিতো মানবদেহের কোষের শক্তিঘরের খবরও জানো, তাই তুমি যাও ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করো। আর একজন প্রেমিককে বলা হলো তুমিতো দেবদাস পড়েছো, শেষের কবিতা পড়েছো, রোমিও জুলিয়েট পড়েছো, অনেক মন দেয়া নেয়া করেছো তাই তুমি যাও অপারেশন থিয়েটারে এখনই একজনের হৃদপিন্ডে অস্ত্রাপচারের জন্য। একজন প্রকৌশলীকে বলা হলো তুমি কলকব্জা তৈরি করো পুরাতন ভেঙ্গে নতুন করে গড়ো, জোড়াতালি ভালোই মারো, তুমি যাও পঙ্গু হাসপাতালে শিশুর মেরুদন্ডের কশেরুকা প্রতিস্থাপন করো। একজন পদার্থবিদকে বলা হলো, তুমিতো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পড়েছো, তুমি যাও উড়োজাহাজের চাকা লাগাও, স্টিয়ারিং ধরো। আর একজন রসায়নবিদকে বলা হলো তুমিতো হাইড্রোজেন আর কার্বন পরমানু কম বেশী করে পানীয়সহ শত সহস্র যৌগ তৈরী করো, অনু পরমানু ভাঙ্গো আর গড়ো, তমি যাও নদী শাসন করো। আচ্ছা বলুনতো কোন কাজটা হবে?

পদার্থ ও রসায়ন আমার প্রিয় বিষয়। প্রকৌশলবিদ্যায় পড়ার সময় আমাদের ১ম বর্ষ ১ম পর্বে ফলিত/তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক কোর্স ছিলো। কিন্তু পদার্থ ও রসায়নের অনার্স ও মাস্টার্সের কোন পর্বে সিভিল, ইইই, রোবটিকস, এআই, আইওটি, আর্কিটেকচার, ড্রাফটিং ইত্যাদি জটিল বিষয় কতটুকু পড়ানো হয়? কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম ২ বছরের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলে ঐ সেক্টরে সে শিক্ষক হতে পারবেনা, এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেনা। করলেও টেকসই উন্নয়ন হবে না। এজন্য আলাদা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়েছিলো। একজন জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার, একজন এফ আর খান স্যার ছিলেন বলেই বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী অনেক কিছুই পেয়েছে। বুর্জোয়াদের চাপে মেধাবীরা কর্মহীন হচ্ছে। ৭৫ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী প্রকৌশলীদের ঠিকানা আইইবি-কে যারা অবজ্ঞা করছেন তাঁরা না বুঝে দেশের ক্ষতি করছেন।

আইইবি’র কম্পিউটারকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে আমি সম্প্রতি প্রকাশিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিপূল জনসংখ্যাকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষা ভাবনা থেকে বর্তমান শিক্ষানীতিতে কারিগরি শিক্ষাকে মূল ধারার শিক্ষা হিসেবে বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষা পরিবারের প্রধান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কারিগরি শিক্ষার এনরোলমেন্ট বৃদ্ধি করে  ২০২১  খ্রিষ্টাব্দে ২০ শতাংশ, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ খ্রিষ্টাব্দে ৫০ শতাংশ করার জন্য সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং বর্তমান বছরে ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ৩২৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মানের জন্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান।

এছাড়া ২৩টি জেলায় ২৩টি পলিটেকনিক স্থাপন এবং ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক স্থাপন কাজসহ কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ এ ব্যপকভাবে উন্নয়ন কাজ চলমান।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কারিগরি শিক্ষক বা ইনস্ট্রাক্টর বা ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে যাতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পায় তার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী "কারিগরি শিক্ষা কর্মচারী নিয়োগবিধিমালা ২০২০ "অনুমোদন করেছেন।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, উড টেকনোলোজি ইত্যাদি) পদে কিভাবে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত পদার্থ/রসায়নে পাস করা গ্রাজুয়েট হাতে কলমে এই শিক্ষা দেবেন? যাদেরকে আমরা ওস্তাদ হিসেবে জানি, হাতে-কলমে দক্ষ এই সব কারিগরকে বঞ্চিত করে কিভাবে কারিগরি শিক্ষা সামনের দিকে অগ্রসর হবে?
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং টিটিসি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি ভোকেশনাল পাস করা শিক্ষার্থীদের যদি নিয়োগবিধিতে সুযোগ থাকা সত্বেও চাকুরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয় তা হলে এই শিক্ষা দিয়ে লাভ কি?

বড় বড় ভবন ঠিকই নির্মিত হবে কিন্তু এইসব ষড়যন্ত্রের কারণে ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং কারিগরি শিক্ষা ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। ফলে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দারুণভাবে ব্যহত হবে।
কারিগরি প্রশাসনে অকারিগরি ব্যক্তিদের দৌরাত্বের কারণে কারিগরি শিক্ষা ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে।

পরিশেষে আমি দুটো দাবি করছি:

১. ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর বা কারিগরি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের পরিবর্তে কারিগরি বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

২. কারিগরি শিক্ষাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে অনতিবিলম্বে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে অনুমোদিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী এসএসসি/এইচ এস সি ভোকেশনাল ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030031204223633