কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেফতার

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল শনিবার তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে সনদ বিক্রির অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এই সূত্রমতে, শেহেলা পারভীন স্বীকার করেছেন যে কুষ্টিয়ার গড়াই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি তাঁকে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। আর এই টাকা তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জাল সনদ প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে আটক হওয়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান। তবে শেহালা পারভীনের দাবি, এটা ঘুষ না। এই টাকা তিনি ‘ধার’ নিয়েছেন।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, কারিগরি বোর্ডের সনদ বাণিজ্য মামলার প্রধান আসামি এ টি এম শামসুজ্জামান এবং সহযোগী আসামি সানজিদা আক্তার ওরফে কলি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই জবানবন্দির ভিত্তিতে শেহেলা পারভীনকে গতকাল দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবিতে আনা হয়।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে শেহেলার বিরুদ্ধে শামসুজ্জামানের সঙ্গে টাকাপয়সা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই মামলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সনদ তৈরির নিজস্ব কারখানায় নিয়োজিত কম্পিউটারম্যান ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন রিমান্ডে আছেন।

ওই সূত্র জানায়, আসামি শামসুজ্জামান শেহালা পারভিনকে একাধিকবার টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ ছাড়া সনদ বিক্রির আয়ের টাকার ভাগ পেয়েছেন অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিক, দুদকের কর্মকর্তা, কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালক সবাই।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, শেহেলা পারভীন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি শামসুজ্জামানকে চিনতেন না। তবে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া কুষ্টিয়ায় অবস্থিত গড়াই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার তাঁকে ফোন করেছিলেন। এরপর সানজিদা তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সানজিদা শামসুজ্জামানকে সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। তখন শেহেলা বলেন, তাঁর স্বামী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান এসব ব্যাপারে তাঁর কোনো কথা শুনবেন না।

শেহেলা পারভীন জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, তিনি সানজিদার কাছে রমজান মাসে কিছু টাকা ধার চান। তিনি বলেছিলেন, ধীরে ধীরে টাকা শোধ করে দেবেন। সেই ধারের টাকাই সানজিদা তাঁকে শামসুজ্জামানের মাধ্যমে উত্তরার বাসায় পাঠান।

জানা যায়, শামসুজ্জামান ভুয়া শিক্ষা সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, নম্বরপত্র ইত্যাদি তৈরি করতেন। ডিবির কর্মকর্তাদের তিনি জানান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালকেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুয়া শিক্ষা সনদ তৈরি করে দিতে বলতেন। এ জন্য ছাত্রপ্রতি ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। বিভিন্ন কলেজের পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দালালেরা এসব সনদ নিতেন।

শামসুজ্জামান ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আগারগাঁও অফিসে কম্পিউটার সেলে কর্মরত ছিলেন।

ডিবি সূত্র জানায়, শামসুজ্জামান অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষারত ও শ্রেণিশিক্ষার বাইরে এসএসসি, এইচএসসি, ডিপ্লোমা সনদ; মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র অবৈধ পন্থায় তৈরি করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্ভারে আপলোড করতেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠলে তাঁকে কম্পিউটার সেল থেকে পরিদর্শন সেলে বদলি করা হয়।

ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এ কে এম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচকানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর, সনদ তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সব ধরনের ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজডের মূল দায়িত্ব তাঁর হাতে ছিল।

সূত্র: প্রথম আলো 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024540424346924