কার্যকর হলো স্মার্ট সুদহার

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে কার্যকর হল ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার করিডোর। কুরবানির ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবস রোববার থেকেই বেড়েছে সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদহার। বহুল আলোচিত ঋণের ৯ শতাংশ সুদের সীমা তুলে নিয়ে আগামী ছয় মাস ব্যাংক ঋণসহ অন্য সব ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার যে সুবিধা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা পেয়ে আসছিলেন, এখন থেকে তা আর পাবেন না।

যদিও ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ দিন ছিল শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটি। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের প্রথম দিন শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি। সে কারণে নতুন বাজেটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে গতকাল রোববার থেকে।

বাজারের সঙ্গে সমন্বয় না করেই নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।  তিনি বলেন, মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি বাড়ানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই এটা নির্ধারণ করতে হবে। সুদহারের সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক একটা দায়সারা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন তা নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনতে এবং নতুন অর্থনীতিকে আরেকটু ভারসাম্যে আনার মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঋণ দিতে গেলে সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে হবে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯-এর ঘরে আছে। তাই ব্যাংকের আমানত ৯ শতাংশের বেশি না হলে মানুষ আমানতে আগ্রহী হবে না। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সুবিধা চিন্তা করে হয়তো এটা করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনতে গেলেও মুদ্রা সরবরাহ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সেক্ষেত্রেও ঋণের সুদহার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে আরো বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। বিনিয়োগকারীদের উপরেও অবশ্যই একটি চাপ পড়ছে। সুতরাং, সামষ্টিক অর্থনৈতিক, রাজস্বনীতি, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মাধ্যমেও সামাল দিতে হবে। শুধু সুদনীতি দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব নয়।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে ‘রেফারেন্স রেট’ অর্থাৎ সুদ গণনা হবে। যার নাম দেয়া হয়েছে ?‘এসএমএআরটি’ (স্মার্ট-সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ)। এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে ‘রেফারেন্স রেট’। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট প্রতি মাসের প্রথম কর্মদিবসে ‘এসএমএআরটি ইনডেক্স’ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। ‘এসএমএআরটি ইনডেক্স’-এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। আর কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করবে।


কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত, ভোক্তা ঋণ ও গাড়ি কেনার ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে সুপারভিশন চার্জ কাটতে পারবে। অর্থাৎ সিএমএসএমই ঋণের সুদহার হবে প্রায় ১১ শতাংশ। তবে সুপারভিশন চার্জ বছরে একবার আদায় বা আরোপ করা যাবে। বার্ষিক ভিত্তিতে আরোপিত এ সুপারভিশন চার্জের ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে কোনো চার্জ বা সুদ আরোপ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণ হিসাব বছরের মধ্যবর্তী সময়ে সমন্বিত করার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে আনুপাতিক সময়ের জন্য সুপারভিশন চার্জ আদায় করা যাবে।

যে মাসের সুদহার নির্ধারণ করা হবে তার আগের মাসের ‘এসএমএআরটি’কে ভিত্তি ধরতে হবে। উদাহরণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মার্চ মাসের সুদহার নির্ধারণে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য নির্ধারিত এসএমএআরটিকে বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ ও বিশেষ তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।

ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত বিদ্যমান সার্কুলার ও সার্কুলার লেটার বর্ণিত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। সুদহার পরিবর্তনের ফলে গ্রাহকের ঋণের প্রদেয় কিস্তির পরিবর্তন করতে হলে কিস্তি পুনর্নির্ধারণের আগে আবশ্যিকভাবে গ্রাহককে জানাতে হবে।

ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক ঘোষিত এসএমএআরটিকে ভিত্তি ধরে তার সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার নির্ধারণ করবে। একই সঙ্গে সুপারভিশন চার্জ আদায় করতে পারবে। কোনো নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাসের জন্য নির্ধারিত সুদহার কার্যকর হবে। সুদহার স্থির অথবা পরিবর্তনশীল যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, ঋণ দেয়ার আগে ঋণগ্রহীতার সম্মতি নিতে হবে। তবে পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সুদহার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাস পরপর পরিবর্তন কার্যকর হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030379295349121