কিংবদন্তি দানবের খোঁজে তোলপাড়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্কটল্যান্ডের মিষ্টি পানির সব থেকে বড় উৎস লক নেস হ্রদ। যার গভীরতা প্রায় ৭৫০ ফুট। সেই হ্রদেই সম্প্রতি ওয়েবক্যামেরা, ড্রোন ও পানির নীচে কথা বলা যায় এমন ফোন নিয়ে নামতে দেখা গেলো স্কটল্যান্ডের শয়ে শয়ে স্বেচ্ছাসেবককে। তাদের উদ্দেশ্য কিংবদন্তির দানব ‘নেসি’কে খুঁজে বের করা।

সপ্তাহান্তে উত্তর স্কটল্যান্ডে লক নেসের কাছে ভিড় করেছিলেন প্রচুর মানুষ। বহু বছর ধরে এই দানবের খোঁজ চালাচ্ছেন স্কটল্যান্ডবাসি। তবে দু’দিনের সাম্প্রতিক এই অনুসন্ধান অভিযান গত ৫০ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

এই অনুসন্ধান অভিযানের দায়িত্বে ছিলো ইনভারনেস শহরের ‘লক নেস সেন্টার’। এই সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরে লক নেস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে।

‘লক নেস সেন্টার’-এর স্বেচ্ছাসেবকরা মূলত এই অনুসন্ধান অভিযান চালালেও, দলে ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বহু মানুষ। ক্যামেরা এবং অত্যাধুনিক যন্ত্র নিয়ে লেকে নেমেছিলেন তাঁরা।

স্কটল্যান্ডের লোককথা অনুযায়ী, লক নেসে রয়েছে অতিকায় এক জলদানব। সে দেশের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে রয়েছে এই দানবের উল্লেখ। অনেক সাহিত্যও লেখা হয়েছে প্রাণীটিকে নিয়ে।
যুগ যুগ ধরে স্কটল্যান্ডের মানুষের বিশ্বাস, এক সময় সে দেশে সত্যি সত্যিই এই অতিকায় প্রাণীর দেখা পাওয়া যেতো এবং এখনও খুঁজলে সেই প্রাণীর খোঁজ মিলতে পারে।

স্কটল্যান্ডবাসীর বিশ্বাস আরও পোক্ত হয় ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে। স্কটল্যান্ডের এক হোটেল ম্যানেজার অ্যালডি ম্যাকে দাবি করেছিলেন, পাহাড়ে ঘেরা লক নেস হ্রদের কাছে তিনি এক বিশালাকায় প্রাণী দেখেছিলেন।

ঘটনাটি স্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য ইনভারনেস কুরিয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদপত্রের তৎকালীন সম্পাদক প্রাণীটিকে ‘দানব’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। এর পর রহস্যময় প্রাণী ‘নেসি’কে নিয়ে একাধিক টিভি শো এবং সিনেমা বানানো হয়েছিল।

তবে অনেকেরই মত ছিল, ওই হোটেল ম্যানেজার যে প্রাণী দেখেছিলেন, তা নেসি নয়। অনেকে আবার সেই রহস্যময় প্রাণীটিকে প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক সরীসৃপ, দৈত্যাকার ইল, বা হাতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। 

তবে সত্যি যাই হোক, ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের পর ‘নেসি’র উপস্থিতির গল্প হাওয়ার মতো স্কটল্যান্ডের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয় লক নেসের আশপাশের এলাকা।

বেশ কয়েক বছর অতলান্তিক মহাসাগরের নির্জন দ্বীপ সেইমোরের গভীরে থাকা বরফের স্তূপ থেকে খোঁজ মিলেছিল আশ্চর্য এক প্রাণীর জীবাশ্মের। অনেক বছর ধরে এই জীবাশ্মকে নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন এই জীবাশ্ম ‘নেসি’র।

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এই জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেছিলেন পারদু ইউনিভার্সিটির উইলিয়াম জিন্সেমিয়েস্টার। খারাপ পরিবেশ থাকার কারণে বহু বছর লেগে যায় এটি সম্পূর্ণ খুঁড়ে উদ্ধার করতে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ ভাবে এই জীবাশ্মটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

জীবাশ্মের প্রাণীটি ছিল ৪০ ফুট লম্বা। ওজন আনুমানিক ১৫ টন। প্রায় ৭০ হাজার বছরেরও পুরনো এই জীবাশ্ম লক নেসের দানবের বলে ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
দীর্ঘ গলা বিশিষ্ট ওই জীবাশ্ম আসলে কোন প্রাণীর তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। 

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি ছিল, এটি লক নেসের দানবের। অন্য দিকে, কেউ কেউ বলেছিলেন, এরা প্লিজিওসর। যা ডাইনোসরের এক প্রজাতি।

এর পর, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে লিভারপুলের বাসিন্দা কলিন ভিকক গিয়েছিলেন লক নসের কাছে। তাঁর দাবি, তিনি সেখানে ওই জলদানবের খোঁজ পেয়েছিলেন। পেশায় গাড়িচালক ৫৫ বছরের কলিন নাকি দূরবিনে চোখ রেখে জলের মধ্যে থাকা দানবের আকার মাপারও চেষ্টা করেছিলেন। এর পর থেকে লক নেসে রহস্যময় জলদানবের উপস্থিতি নিয়ে ফের বাড়ছে রহস্য।

৩০ জুলাই লক নেসে এই প্রাণী দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন কলিন। তার আগে ১৯ জুলাই চেস্টারের এক ব্যক্তি এসেছিলেন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। তিনিও ওই প্রাণী দেখার দাবি করেছিলেন। ১১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার লক নেস দানব দেখার দাবি ওঠে। কিন্তু তার অস্তিত্ব এখনও প্রমাণিত নয়।

সূত্র: আনন্দবাজার 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022561550140381