কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভেড়ার খামার, ফল বিক্রি করছেন শিক্ষক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি |

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় করোনায় বন্ধ ১২০টি কেজি স্কুলের ১ হাজার ১০০ জন শিক্ষকের গত দেড় বছর ধরে মানবেতর জীবন চলছে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মহাবিপাকে থাকলেও তাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। এমনকি তাদের মানবিক আবেদনেও কেউ সাড়া দেয়নি। 

ফলে এদের কেউ এখন ফল বিক্রেতা, কেউ আবার ক্যালেন্ডার মিলের কর্মচারী,কেউ লুঙ্গি বিক্রেতা, কেউ করছেন সবজি চাষ, কেউ করছেন ভেড়া পালন। এরই মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার ১০টি স্কুল। এসব স্কুলের ১ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

শুক্রবার সকালে শাহজাদপুর পৌর এলাকার নতুনমাটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একটি চায়ের দোকানের পাশে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ফকরুল মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম পেয়ারা-লেবু বিক্রি করছেন। 

এ স্কুলের অপর শিক্ষক জাকারিয়া ইসলাম ঠান্ডু ন্যায্যমূলের চালের ডিলারের কর্মচারী হিসেবে স্কুল প্রাঙ্গণে চাল বিক্রি করছেন। এ স্কুলের শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন এখন একটি ক্যালেন্ডার মিলের কর্মচারী।

উপজেলার সোনাতনী গ্রামের সান বীম কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও ইউনুস আলী বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে স্কুল প্রাঙ্গণে ভেড়া পালন ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন। 

করতোয়া বিজ্ঞান স্কুলের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম স্কুলটি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে গোডাউন ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া নিজে কাপড়ের দোকান দিয়েছেন। ওয়েস্টান স্কুলের শিক্ষক হায়দার আলী মাঠা (লাফাং) বিক্রি করেন। ওই স্কুলের অপর শিক্ষক জয়নুল আবেদীন শাহজাদপুর কাপড় হাটে লুঙ্গি বিক্রি করেন। 

বাগানবাড়ি স্কুলের শিক্ষক মাহবুব ইসলাম এখন মুদি দোকানদার। তালগাছি রেইনবো স্কুলের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম এখন এলপিইজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতা। তারা নিরুপায় হয়ে জীবিকার তাগিদে এসব পেশা বেছে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে পেয়ারা বিক্রেতা ফকরুল মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন,কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে রাস্তায় নেমে ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে পেয়ারা বিক্রি করছেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। করোনাকালে সরকার বহু পেশাজীবী সংস্থাকে অনুদান দিয়েছে। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের মানবেতর জীবন দেখেও কোনো ব্যবস্থা করেনি। ফলে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ আমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক হয়েও ফুটপাতে পেয়ারা বিক্রি করে জীবিকা চালাতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

ছবি : সংগ্রহীত

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাকারিয়া ইসলাম ঠান্ডু বলেন, কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষকদের বাঁচিয়ে রাখতে মানবিক সহায়তা চেয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে মানববন্ধন করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডিসি, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোনো মানবিক সহায়তা পাইনি। এমনকি কেউ আমাদের কোনো খোঁজখবরও নেয়নি। ফলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মহাবিপাকে আছি। বিকল্প হিসেবে আমরা যে যেমন পারছি কাজ করে জীবিকা চালাচ্ছি।

১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার কথা থাকলেও অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল অর্থ সংকটে এখনো প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ফলে ওই সব স্কুল খোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের এ সংকট মোকাবেলায় তিনি জরুরিভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি অনুদান প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুল হক বলেন, তারা আমাদের আওতাভুক্ত নয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা শুধু তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকি। এছাড়া তাদের বিষয়ে আমাদের আর কিছুই করার নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034968852996826