কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয় ২৪’ নামকরণ করা হয়েছে।
৭ আগস্ট বুধবার সকালে দুই দিনের চেষ্টার পর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত সোমবার হলের নতুন নামকরণ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন। মিছিলের শুরুতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকা কাচের তৈরি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
এরপর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ড্রিল মেশিন ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেন। সে সময় ভাস্কর্যটির গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে রাখেন তারা। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের দেয়ালে আঁকা ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’ লেখা সম্বলিত চিত্র ফলকে কাদাও নিক্ষেপ করা হয়।
বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাথে থাকা কিছু
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম ফলকে কাদা ও স্প্রে দিয়ে মুছে অপর পাশে ‘বিজয় ২৪’ নামকরণ করেন। এর কিছুক্ষণপর বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক নাদিম আহমেদ একটি স্প্রে দিয়ে নোটিশ বোর্ডে থাকা বঙ্গবন্ধুর নামটিও মুছে ফেলেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন ও সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এ কর্মকা-ের সাথে জড়িত নয়। কে বা কারা এই ভাঙচুর চালিয়েছে এবিষয়ে তারা কিছু জানেননা।
এদিকে দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে কিছু জানেননা বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। জাতীয় সম্পদের ক্ষতি ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের কাছে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলার দুইদিন পার হয়ে গেলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি। শেখ পরিবারের সদস্য দাবি করা উপাচার্য ড. আবদুল মঈনের মন্তব্য জানতে দুইদিন ধরে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
কুবি : মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বন্টনসহ তিন সিদ্ধান্ত
এদিকে কুবি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ তম সিন্ডিকেট সভায় এ বিসয়টিসহ আরো তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির ।
তিনি জানান, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত গুলো হলো, আগামী ১১ আগষ্ট থেকে হল খুলে দেয়া হবে (অবৈধ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারবে না), মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন করা হবে, ১২ আগষ্ট থেকে অনলাইনে ক্লাস এবং ২৫এ আগষ্ট থেকে সরাসরি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে গত ১৬ জুলাই সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।