কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত মার্চ থেকে তিন দফা ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষকেরা। সেই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষকদের পেনশন স্কিম বাতিলের কর্মসূচি এবং বন্যার মতো দুর্যোগের কবলে পড়ে ব্যাহত হয় শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে প্রায় ১৫৬ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থেকে দেখা দিয়েছে সেশনজট।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা প্রায় ৬ মাসের মতো পিছিয়ে পড়েছেন। তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় জুন মাসে ‘রিকভারি প্ল্যান’ করার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কিন্তু এখনো তেমন কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। তাঁদের পরামর্শ হলো, চার মাসে সেমিস্টার শেষ করার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হলে তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও কাটবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তৃতীয় সেমিস্টারে আছি। কিন্তু আমরা যদি একাডেমিক ক্যালেন্ডার হিসাব করি, তাহলে আমাদের ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ষষ্ঠ সেমিস্টার শেষ করে ফেলার কথা। এখন যদি তা করতে হয়, তাহলে শিক্ষক সমিতির উচিত, শিক্ষকদের সে রকম নির্দেশনা দেওয়া, যেন চার মাসের মধ্যে সেমিস্টারগুলো শেষ করা যায়। তা হলেই আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে ফেলা সম্ভব বলে মনে করছি।’
ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তৌসিফ বিন পারভেজ জানান, তাঁদের বিভাগের চেয়ারম্যান যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিয়েছেন, সে অনুযায়ী তাঁরা জানুয়ারিতেই সামনের সেমিস্টার শুরু করতে পারবেন। এমন হলে তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছু লাঘব হবে। এমন উদ্যোগ সবগুলো বিভাগে নেওয়া হলে সবাই উপকৃত হবেন।
এ বিষয়ে কথা হলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আসলে রিকভারি প্ল্যান করতে হলে সাধারণ সভার আয়োজন করতে হবে। ৫ আগস্টের পর দেশে পটপরিবর্তন হয়েছে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় অভিভাবকশূন্য ছিল। সেটির ফলে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে শিগগিরই আমরা সাধারণ সভা করে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে দিতে যথাযথ উদ্যোগ নেব।’
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে চার মাসে সেমিস্টার করার বিষয়ে অধ্যাপক তাহের বলেন, ‘চার মাসের সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেট পাবে; কিন্তু ভালোভাবে কিছু শিখতে পারবে না। এমন অনেক বিভাগ আছে, যেগুলোতে চার মাসে সেমিস্টার শেষ করা সম্ভব নয়। তবে যদি রিকভারি প্ল্যান হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য শুধু এ প্ল্যান গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা করা যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষক সমিতি এখনো এ বিষয়ে তেমন কিছু ভাবেনি। আমরা সাধারণ সভায় এবং উপাচার্য স্যারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’