কুড়িগ্রামের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২৫ বর্ষপূর্তি এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য উদযাপিত হতে যাচ্ছে মাত্র একদিন পর। দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠেয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আগামী শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি)। আগামী শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চলবে বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠান।
বর্ষপূর্তি ঘিরে পুরাতন-নতুন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী আর ইহজগতে নেই। বর্তমান ও জীবিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আয়োজনে আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপী বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হতে চলেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চারিদিকে সাজ সাজ রব চলছে। অনুষ্ঠান ঘিরে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্ততি। বিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু করে দালানকোঠা, গাছপালায় আলোক সজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনও লাগানো হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। নতুন ভবনের সামনে বিশাল এক মঞ্চ গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন চলছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক মহড়া। এ যেন এক নতুন পুরাতনকে ঘিরে হয়ে উঠবে এক মহামিলনমেলা। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় বা দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসছেন কুড়িগ্রামে এই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অনেকটা সেই পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার মতো।
বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দীন আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলী, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু মো. সাইদ হাসান লোবান ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আবু হোসেন সরকার।
কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির সভাপতি ও কুড়িগ্রাম শিশু নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান প্রতিমা চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা আমরা কুড়িগ্রামে বসবাস করছি, আমরা প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে একত্রিত হই। সেখান থেকে অনেকের অনুপ্রেরণায় ১২৫বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন। আমাদের কমিটিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। আশাকরি বিদ্যালয়ে এসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের স্মৃতি রোমন্থন করবেন তেমনি তাদের অবস্থান থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কিছু করার ঘোষণা দেবেন। শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিনই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন। তারা অপেক্ষা করছেন সেই দিনের। অনুষ্ঠানটির সফলতায় সবার সহযোগিতা চাই।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. রজব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়টি কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। বালিকা বিদ্যালয় নাম হলেও এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই প্রাথমিক পর্যায়ে পড়তে পারে। আমরাও পড়েছি। এখানে জীবিতদের মধ্যে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষার্থীও রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের বয়সী থেকে পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে তাদের স্মৃতি বিজরিত বিদ্যালয়ের বর্ষপূর্তিতে আসছেন। সত্যি এক অভাবনীয় অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ভীষণ খুশি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু হোসেন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়টি ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন মহকুমা প্রশাসকের স্ত্রীর নামানুসারে ‘সরলা গার্লস’ স্কুল নামে জেলার বিদ্যাপীঠ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে যা কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বিদ্যালয়টি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু মো. সাইদ হাসান লোবান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়টি শতাধিক বছর ধরে মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে মাথা উুঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয়ের ১২৫ বর্ষপূর্তি নিয়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের বাইরেও শহরের নানা মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আয়োজকদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রথমদিন ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে নিবন্ধনকৃত বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্র্থীদের পরিচতি পর্ব। এসময় তারা কুপন ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করবেন। এরপর তাদের সবার অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাতে সমাপ্তি হবে। দ্বিতীয় দিনে ১১ ফেব্রুয়ারি মূল অনুষ্ঠান। একটি বর্ণাঢ্য র্যালি দিয়ে সকালের অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য, শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের স্মৃতিচারণ, সংবর্ধনা, খাবার পরিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিনভর অনুষ্ঠানমালা চলবে রাত অব্দি।