দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: তরুণীকে বিয়ে করলেও তার সামাজিক স্বীকৃতি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফুয়াদ হোসেন শাহাদাতের বিরুদ্ধে। তরুণীর দাবি, তাকে বিয়ে করলেও সেই তথ্য লুকিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদ বাগিয়েছেন শাহাদাত। এ ছাড়া শাহাদাতের বিরুদ্ধে মারধর ও গর্ভপাত ঘটানোরও অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। অভিযোগ অস্বীকার করে এই ছাত্রলীগ নেতা উল্টো ওই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম আইনে তারা বিয়ে করেছিলেন। যখন তিনি শাহাদাতের কাছে তাদের বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ করেন, তখন মারধরের শিকার হয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে
অভিযোগ করেছেন। যদিও এর সপক্ষে বিয়ের কাবিননামা বা এর অনুলিপির মতো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। শুধু বিয়ে নয়, ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাতের বিরুদ্ধে জোর করে গর্ভপাত ঘটানোরও অভিযোগ তোলেন তিনি। এমন অভিযোগ তুলে শাহাদাতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় শাহাদাতের সঙ্গে দীর্ঘদিন একই বাসায় একসঙ্গে থেকেছেন বলে উল্লেখ করেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সন্তানসম্ভবা হলে শাহাদাত জোর করে তার গর্ভপাত করান বলে অভিযোগ করেন তিনি।তিনি একই অভিযোগে থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। আর ওই ছাত্রলীগ নেতাও তরুণীর বিরুদ্ধে তিনটি জিডি করেছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত এর আগে ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীও ছিলেন এই নেতা।
গত ২৪ মে অভিযোগকারী তরুণী ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে ১০ বছরের সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিষয়ে তিনি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব দেন। পরে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ৫ এপ্রিল মীমাংসা করতে বসার সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ৩ এপ্রিল ফুয়াদ তাকে অনেক অনুরোধ করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য তার বাসায় ডেকে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, বাসায় যাওয়ার পর সমাধান না করে ফুয়াদ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি লাথি মারেন এবং মারাত্মকভাবে জখম করেন। তিনি উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফকে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানান। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।অভিযোগে ওই তরুণী আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই ফুয়াদ আমার পরিবারের সবার নামে মামলা দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এমনকি আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি ও আমার মানসম্মান নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছেন। তার এসব কার্যকলাপে আমি আতঙ্কিত। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম আইন অনুসারে আমাদের বিয়ে হয় এবং সব নথি নিজের কাছে আটকে রাখেন ফুয়াদ। পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।’
ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ওই তরুণী যেসব অভিযোগ করেছেন, তার পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তার কখনো বিয়ে হয়নি। তার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে ওই নারী মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ওই নারীর বিরুদ্ধে তিনি একাধিক জিডি করেছেন।
গত বছরের ৩ নভেম্বর ছাত্রলীগের এই নেতা হাজারীবাগ থানায় সম্মানহানির অভিযোগ এনে এই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি জিডি করেন। গত ৪ এপ্রিল পল্লবী থানায় আবারও একটি জিডি করেন তিনি।
এবারের জিডিতে ফুয়াদ বলেন, ‘সে নিজেকে আমার স্ত্রী দাবি করে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের থেকে টাকা নেয়। যদিও তার সাথে আমার কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।’ এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যাপের সাহায্যে ওই তরুণী তাকে ফাঁসাতে পারেন এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে গত ৭ এপ্রিল ফুয়াদ রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরেকটি জিডি করেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘ওই তরুণীর অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে ফয়সালা করতে পারব বলে আশা করি।’ অভিযোগের সত্যতা পেলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ইনান।