কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

গত মাসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দেখে আসার পর থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাওয়ার আগ্রহ দিন দিন বাড়তে থাকে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। দেশে ফেরার আগে যে করে হোক নন্দিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখে যেতে হবে। আমার ছেলে সুবিধামত সময়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে সব ব্যবস্থা করে রাখে। কিন্তু সময়ের অভাবে যাই-যাই করেও আমাকে নিয়ে তার যাওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে জনৈক ছাত্র কামরুল বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে নিয়ে যায়। সেখানে তার বাসায় প্রায় এক সপ্তাহ থেকে লন্ডন শহর ঘুরে দেখি। লন্ডন শহরের অনেকগুলো দর্শনীয় জায়গা দেখা হয়ে যায়। অনেক পরিচিত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। সহপাঠি বন্ধু আবিদ লন্ডন থেকে প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরে সাউথএন্ডে থাকে। সেখানে যেতে ফোনে বার বার অনুরোধ করে। কেমব্রিজে যাওয়ার আগ্রহের বিষয়টি কথা প্রসঙ্গে তাকে একদিন বলেছিলাম। তার ওখানে গেলে পরদিন সে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়া তার বাসার অদূরে সী বিচ আছে। আমাকে সে লন্ডন থেকে এসে নিয়ে যাবে বলেও জানায়। দীর্ঘ ৩৫ বছর দেখা নেই। লন্ডন থেকে অনায়াসে সাউথএন্ডে যাওয়া, আবিদের সঙ্গে সাক্ষাত, সৈকত দর্শন এবং সর্বোপরি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখার সুযোগ হাতছাড়া না করতে আবিদের ওখানে যেতে রাজি হয়ে যাই।

গত ৪ সেপ্টেম্বর কামরুলের আপটন পার্কের বাসা থেকে আফসানা ভাবির সহোদর কয়েছ ভাই নিজের গাড়ি দিয়ে সাউথএন্ডে আবিদের বাসায় পৌঁছে দেন। বিশেষ কাজে আবিদ আমাকে নিতে আসতে পারেনি বলে তাকে পাঠায়। কয়েছ ভাইয়ের সঙ্গে গল্পে গল্পে লন্ডন শহরের আপটন পার্ক থেকে এক ঘণ্টার কম সময়ে সাউথএন্ড পৌঁছে যাই। পুরো বিকেল সামছুদ্দিন চাচার (আবিদের জনৈক চাচা) সঙ্গে সৈকতে কাটাই। পরদিন সকালে সমুদ্রের ভরা যৌবন দেখতে আবার সৈকতে যাই। পরিকল্পনা মতে সৈকত থেকে ফিরে এসে আমি, আবিদ, আফসানা ভাবি ও তাদের একমাত্র ছেলে তাজওয়ার কেমব্রিজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। আবিদ নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে চলে। সাউথএন্ড থেকে কেমব্রিজ প্রায় ৭৫ মাইল দূরের পথ। ব্রিটিশ পদ্ধতিতে দূরত্বের একক মাইল বলে এদেশে কিলোমিটারের ব্যবহার নেই। রাস্তায় যানবাহন বেশি থাকার কারণে কেমব্রিজ শহরে পৌঁছতে প্রায় দুই ঘণ্টার মত লেগে যায়। কেমব্রিজ শহরে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে পড়ে। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মসজিদ দেখতে আসে। আমরা রওয়ানা দেওয়ার সময় আফসানা ভাবি প্রথমে মসজিদটি দেখে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিশাল মসজিদ। মহিলা ও পুরুষের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা। মসজিদের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং। জোহরের আজানের ঠিক আগে আগে আমরা গাড়ি পার্কিং করে মসজিদের ভেতরে চলে যাই। অজু করতে গিয়ে আমার জনৈক ছাত্র শাহেদের সঙ্গে আকস্মিক দেখা। সঙ্গে তার শিশুপুত্র। তারা সত্তর-আশিজন মিলে লুটন থেকে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে এসেছেন। আমাকে হঠাৎ পেয়ে শাহেদের কী যে আনন্দ !  বহুদিন পর তাকে দেখে আমিও আনন্দ অনুভব করি। বুকে জড়িয়ে ধরি। এক সঙ্গে জোহরের নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে মসজিদের ক্যান্টিনে চা পান করি। ফ্রি ক্যান্টিন। পয়সা দিতে হয় না। মসজিদের সৌজন্যে ক্যান্টিন। সেলফ সার্ভিস। এরপর আমরা গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একদম কাছাকাছি একটি পার্কিং ভবনের তিনতলায় গাড়ি পার্কিং করে বেরিয়ে পড়ি। দোতলা পর্যন্ত পার্কিংয়ের সুযোগ ছিল না। ততক্ষণে দোতলা পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক কেমব্রিজ শহর, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আর বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে আসেন।

দুপুর গড়িয়ে যায়। ক্ষুধা বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার আগে কাছাকাছি একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে আমরা খাবার খেয়ে নিই। এরপর স্বপ্নের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে যাই। আবিদ ও আফসানা ভাবি ইতিপূর্বে আরো কয়েকবার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বেড়িয়ে গেছেন। তাই তারা দুজনে গাইডের ভূমিকা পালন করে কেমব্রিজের প্রধান প্রধান কলেজ ও হলসমুহ ঘুরে ঘুরে দেখান। অবশ্য আবিদের চেয়ে আফসানা ভাবির কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানাশোনা বেশি বলে মনে হয়েছে। তাই আফসানা ভাবিই প্রধান গাইডের ভূমিকা পালন করেন। মূলত তার কারণেই কেমব্রিজ শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। যাই হোক, সেদিন প্রায় দু'-তিন ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে এবং পরবর্তী সময়ে উইকিপিডিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে কেমব্রিজ সম্বন্ধে যেটুকু জেনেছি, তা পাঠকদের কৌতুল নিবৃত করার জন্য এখানে তুলে ধরছি।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত। লন্ডন থেকে ৬০-৬৫ মাইল দূরে। এটি ইংরেজিভাষী লোকজনের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বিশ্বের সবচেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় দুইশ’ বছর পর অক্সফোর্ড শহরের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পণ্ডিত ব্যক্তির বিরোধ দেখা দেয়। সেসময় এরকম বিরোধ অক্সফোর্ডের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে প্রায়ই লেগে থাকত। সেই বিরোধের জেরে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অক্সফোর্ড শহর ত্যাগ করে কেমব্রিজ শহরে চলে আসেন। এখানে এসে তারা একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনটির মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিখ্যাত  কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। প্রাচীন নথিপত্র অনুসারে ১২০৯ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে বিশ্বের এমন প্রাচীনতম তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এটি একটি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিরোধের কারণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমব্রিজ আসা পণ্ডিত ব্যক্তিদের হাত ধরে এর যাত্রা বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিষয়ের সঙ্গে এর মিল দেখতে পাওয়া যায়। তাই অনেকে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রে 'অক্সব্রিজ' বলে থাকেন। উভয়ের বিভিন্ন কলেজ ও হল এমনকি ক্যাম্পাসের অবকাঠামোর মধ্যেও এক ধরনের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের সঙ্গে সমান তালে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্সফোর্ডকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্ববরেণ্য অনেক খ্যাতিমান লোক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এদের মধ্যে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন, স্যার আইজাক নিউটন, কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ, স্টিফেন হকিং, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, কবি আল্লামা মোহাম্মদ ইকবাল, লর্ড বায়রন, জন মিল্টন প্রমুখের নাম সর্বাগ্রে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জন হার্ভার্ডও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শত শত বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিপ্লবীর পদচারণায় সর্বদা মুখরিত হয়ে থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, যা বিশ্বের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করতে পারেনি। এখানে ১৫ জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, ৩০ জনের মত বিদেশি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং ৯ জন রাজা লেখাপড়া করেছেন।

৩১টি কলেজের সমন্বয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। এর মধ্যে নারীদের জন্য তিনটি বিশেষায়িত কলেজ রয়েছে। এগুলো ম্যারে এডওয়ার্ড, নিউহ্যাম ও ক্যাভেন্ডিস কলেজ। বাকি আটাশটি কলেজের প্রতিটি মিশ্র কলেজ। প্রথম অবস্থায় কোন কলেজই নারী শিক্ষার্থী ভর্তি করত না। সর্বপ্রথম ডারউইন কলেজ পুরুষ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে। প্রতিটি কলেজ স্বনিয়ন্ত্রিত। সকল অনুষদ, বিভাগ, গবেষণা কেন্দ্র, ল্যাবরেটরি এবং পাঠাগার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, আবাসন, ডিগ্রি প্রদান, পাঠ্যসুচি নির্ধারণ ও শিক্ষক নিয়োগ স্ব স্ব কলেজই করে থাকে। তবে সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ম-কানুন মেনে করতে হয়। মূলত অক্সফোর্ডের মত কেমব্রিজও একটি কলেজিয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত ছয়টি কলেজ ছাড়া অন্য কলেজগুলো যে কোন বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। থাকা, খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ একেক কলেজে একেক রকম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনই দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়। অধিকাংশ কলেজই শহরের কেন্দ্রস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা পঁচিশ হাজারের উপরে। একাডেমিক স্টাফ সাত হাজারের মত। এডমিন স্টাফ তিন হাজারের উপরে। সব মিলিয়ে একশ'র বেশি বিভাগ। পুরো কেমব্রিজ শহরে যত লোক বসবাস করে, তার এক পঞ্চমাংশের বেশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের আয়তন ৩,৬৬,৪৪৪ বর্গমিটার। ১৫ মিলিয়ন বই সমৃদ্ধ ১১৪টি লাইব্রেরি এবং কলা, বিজ্ঞান ও শিল্প বিষয়ক ৮টি যাদুঘর আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি দৃষ্টিনন্দন বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চমৎকার আবাসন ব্যবস্থা আছে। সিঙ্গেল রুম, ডাবল রুম, এমনকি ফ্যামিলি নিয়ে থাকার মত রুমেরও ব্যবস্থা আছে। আবাসন ব্যবস্থা খুবই ব্যয়বহুল হলেও স্কলারশিপের মাধ্যমে অনেকে বিশাল অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। কেমব্রিজ শহরের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে শিক্ষা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন। দেখে মনে হয়, পুরো কেমব্রিজ শহর গবেষণা সংশ্লিষ্ট মানুষে ভর্তি। শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে বেশিরভাগ লোক নিজেদের গবেষণার বিষয় নিয়ে কথা বলছে। প্রকৃতপক্ষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লাইব্রেরি 'কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি' বিশ্বের বৃহত্তম লাইব্রেরিগুলোর অন্যতম। এতে ৮০ লাখেরও অধিক বই, পাণ্ডুলিপি ও গবেষণাপত্র রয়েছে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে প্রতি বছর যত নতুন বই প্রকাশিত হয়, সেগুলোর সবগুলোরই একটি করে সৌজন্য কপি এই লাইব্রেরিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কলেজে একটি করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২ লাখেরও বেশি পুস্তক সমৃদ্ধ ট্রিনিটি কলেজের রেন লাইব্রেরিটি সবচেয়ে বড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ এবং বিভাগের একটি করে নিজস্ব বিশেষায়িত লাইব্রেরি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান আহরণে অন্য এক মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

'কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন' শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠনটি সম্পৃর্ণ অরাজনৈতিক। এরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা ও অধিকার আদায়ে কাজ করে। শিক্ষামূলক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন এবং গবেষণা কর্মকাণ্ডে স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কাজ করে থাকে। অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। অক্সফোর্ডের মত ক্যামব্রিজেও আমাদের দেশের মত লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির নাম-গন্ধ নেই। বিশাল ক্যাম্পাসের যতটুকু ঘুরে দেখেছি, কোথাও ভবনের দেয়াল কিংবা ওয়ালে চিকা মারা কিংবা রাজনৈতিক কোন পোস্টার চোখে পড়েনি। কোন রাজনৈতিক মিছিল কিংবা মিটিংয়ের বালাই নেই। পুরো ক্যাম্পাস এমনকি গোটা কেমব্রিজ শহর জুড়ে কেবলি জ্ঞান চর্চা করার এক অসাধারণ অনুকূল পরিবেশ। জ্ঞান বিতরণ ও আহরণের অনন্য তীর্থস্থান।

ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে যায়। অনিবার্য কারণে সন্ধ্যা সাতটার ট্রেনে আমাকে বার্মিংহাম ফিরে যেতে হবে। ততক্ষণে আবিদ ও আফসানা ভাবি খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ভাতিজা তাজওয়ার অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে আনন্দচিত্তে তখনো আমাদের পিছে পিছে হেঁটে চলেছে। আর দেরি না করে কেমব্রিজ ক্যাম্পাসকে বিদায় জানিয়ে সাড়ে পাঁচটার দিকে আমাদের গাড়ি লন্ডনের পথে ছুটে চলে। সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে লন্ডনের ইউস্টন রেল স্টেশনে পৌঁছে যাই। কাউন্টারে গিয়ে আবিদ ও আফসানা ভাবি বার্মিংহামের টিকিট কেনে আমাকে ট্রেনে তুলে দেন। ট্রেনে উঠে সিটে বসি। ঠিক সময়ে ট্রেন ছেড়ে দেয়। সারা পথ ট্রেনে বসে আবিদ ও আফসানা ভাবির আতিথেয়তা এবং ভাতিজা তাজওয়ারের সরলতা নিয়ে কেবল ভেবেছি। সেই সাথে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনীয় ক্যাম্পাস এবং জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান অর্জনের অনাবিল আবহের কথা ভেবে বার বার মুগ্ধ হয়েছি। রাত নয়টায় ঠিক সময়ে বার্মিংহামের নিউ স্ট্রিট রেল স্টেশনে পৌঁছে যাই। বাইরে তখন তুহিন আমার জন্য ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করছিল।

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048329830169678