বিশ্বব্যাপী কোকোর দাম পৌঁছেছে নতুন রেকর্ডে। নিউ ইয়র্কের পণ্যের বাজারে প্রতি টন কোকোর দাম পৌঁছেছে ৫,৮৭৪ ডলারে যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আর কোকোর এমন দাম বৃদ্ধির কারণে কপালে ভাঁজ পড়ছে চকলেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
কোকো বা কোকোয়া দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার একটি উদ্ভিদ। মূলত এর বীজ থেকেই চকলেট তৈরি হয়। তবে বর্তমানে আমেরিকা ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে চাষ হচ্ছে এই উদ্ভিদের। কোকোয়া ফলটি ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রথম ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য আমেরিকা থেকে ইউরোপে নিয়ে এসেছিলেন। পরে ফরাসিরা এই গাছের সন্ধান পায়। ১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে এক ফরাসি নাগরিক লন্ডনে ‘চকলেট হাউস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হয়ে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কোকোয়া চাষের বেশি প্রসার ঘটে। এরপর ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে চকলেট।
প্রায় ৩০টির মতো বীজ থাকে প্রতিটি কোকোয়া ফলে। ফল পাকলে কোনো জাতের ফলের রং হয় লাল আবার কোনোটা গাঢ় হলুদ। পাকা ফলের ভেতরের বীজ বের করে শুকিয়ে গুঁড়া করতে হয়। আর সেই পাউডার থেকেই বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে তৈরি হয় চকলেট।
চকলেট উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হিসেবে কোকোর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে পৃথিবীর সিংহভাগ কোকো উৎপাদন হয় আইভরিকোস্ট ও ঘানায়। এই দুটি দেশেই সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কোকো উৎপাদনে সার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া এল নিনোর প্রভাবে খরাজনিত কারণে কোকোর উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে এটির উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর এ কারণেই মূলত চকলেটের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু দাম বাড়াই নয়, বরং কোকো সংকট সার্বিকভাবে চকলেটের মানকেও প্রভাবিত করবে। ছোট হবে চকলেটের আকার। কমবে চকলেটের গুণগত মান। আর ভাল মানের সুস্বাদু চকলেট খেতে হলে খরচাটাও করতে হবে ঢের বেশি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গত কয়েক বছর ধরে চকলেটের দাম বাড়া সত্ত্বেও গেল বছরগুলোতে চকলেট কোম্পানিগুলো বিপুল মুনাফা করেছে। কারণ দাম বাড়লেও চাহিদা কমেনি মোটেও। কিন্তু বর্তমানে কোকোর দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই সাথে চিনির দামও এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্টের বিখ্যাত চকলেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হার্শে তাদের চকলেটের মূল্যবৃদ্ধি করায় তাদের বিক্রি অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এরই মধ্যে কোম্পানিটি চলতি ও আগামী বছরের জন্য চকলেটের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে। একই পথে হাটছে মেন্ডেলেজ ও লিণ্ডির মতো প্রতিষ্ঠান। তাই সব মিলিয়ে চকলেটপ্রেমীরা কিছুটা হলেও মুখরোচক এই চকলেট খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রিয়জনকে 'চকলেট ডে'-তে বাহারী চকলেট উপহার দিতেও হবে একটু বুঝে শুনেই।