কোচিং-রাজনৈতিক পোস্টারে সয়লাব : কে শুনবে গাছের বোবা কান্না?

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

বিভিন্ন কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন আর রাজনৈতিক প্রচারণায় ছেয়ে গেছে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর মহাসড়কে পাশে থাকা গাছগুলো। পোস্টারের পেরেকে পেরেকে ক্ষতবিক্ষত বৃক্ষরাজী। আর গাছের গায়ে এসব পোস্টার,ফেস্টুন সাঁটানো হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রচারের আশায় প্রকৃতি আর মানুষের বন্ধু গাছের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে ‘বিকৃত মানসিকতার পরিচয়’ বলে আখ্যায়িত করছেন সচেতন মহল। 

জেলা জুড়ে বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, গাছের গায়ে সাঁটানো বিজ্ঞাপন বোর্ডে সয়লাব। শুধু গাছ নয় বিজ্ঞাপনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রচীরও। এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হবার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ মানুষকে অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন নিয়ে মানুষ ও প্রাণীরা বেঁচে থাকে। জীবন বাঁচানো সেই গাছেরই ক্ষতি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সড়কে লাগানো ছোট বড় গাছের গায়ে লোহার পেরেক দিয়ে সাঁটানো হয়েছে অসংখ্য সাইন বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড। বিভিন্ন গাছে ঝুলছে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণার অসংখ্য ছোট-বড় সাইন বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোও। এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। এক একটি গাছ যেন এক একটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ এসব বোর্ড খুলে পড়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় পথচারী ও যানবাহনগুলোকে। 

সরজমিনে দেখা যায়, চিলমারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয় চত্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সাইনবোর্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক পোস্টার ও ফেস্টুনে অফিসের নাম ঢেকে গেছে। দেখলে সাধারণ মানুষের মনে হবে কোনো রাজনৈতিক কার্যালয় এটি। নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নারিকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছে স্থানীয় সরকার রাজনৈতিক নেতাদের ফেস্টুন পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে। 

রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা সড়কে রাজারহাট পাইলট,বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মীর ইসমাঈধ ডিগ্রি কলেজে ভেতরে ও রাস্তার দু’ধারে ছোট-বড় বিভিন্ন গাছে শত-শত পোস্টার,ফেস্টুন এবং রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ভরে গেছে। 

চিলমারীর বাসিন্দা বুলবুলি খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,উপজেলা প্রাথমিক অফিসে স্থানীয় প্রতিমন্ত্রীর ছবিসহ অনেকেই পোস্টার লাগিয়ে অফিসই ঢেকে রেখেছে। পুরো উপজেলা চত্বরে দেয়ালসহ বিভিন্ন গাছে রাজনৈতিক নেতার প্রচারণার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। 

নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মাহাবুব আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পুরো উপজেলার বিভিন্ন অফিস এবং গাছে শুধু নেতাদের ছবি দিয়ে পোস্টারে সাঁটানো। এতে করে সরকারি অফিসের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধুমাত্র প্রতিবছরের জুন মাস আসলেই নামমাত্র রঙ করা হলেও কিছু দিন পর আবার একই চিত্র।
 
রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র সাব্বির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নাজিমখা সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে আনুমানিক পাঁচ শতাধিকেরও বেশি গাছে পেরেক দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন লাগানো। অবৈধভাবে গাছে পেরেক দিয়ে পোস্টার ফেস্টুন লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। কোনো দিন দেখলাম না গাছে পোস্টার সাঁটানোর জন্য কাউকে জেল, জরিমানা করা হয়েছে।

পরিবেশবিদ ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছের কান্ডে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে করে গাছটি মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। গাছের পরিচর্যা করার বদলে উল্টো বিজ্ঞাপনের নামে গাছের চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। গাছের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ দেশের বন আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।


 
আইনজীবি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে সরকার ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রন) আইন-২০১২ পাস করে। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগালে জরিমানাসহ বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বিজ্ঞাপনের নামে সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে গাছের ওপর হওয়া নির্যাতন কমানো সম্ভব। 

জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জেলার মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে গাছে পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি সাঁটানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো অপসারণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047581195831299