সরকারি চাকরির ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নগরীর ষোলশহর ও দুই নম্বর গেট এলাকার হাজারও শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এ সময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেইট এলাকায় অবস্থান নেন।
শনিবার (৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাটলে করে আসা শিক্ষার্থীরা ষোলশহরে অবস্থান নেন। সেখানে তারা সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের প্রতিবাদে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
ষোলশহরে আন্দোলন শেষে দুই নম্বর গেট এলাকায় যাওয়ার পথে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। পরে পুলিশের বাধা ভেঙে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। পরে স্লোগান দিতে দিতে হাজারো শিক্ষার্থী দুই নম্বর গেট চার রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করে দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আন্দোলনরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে একবার এই কোটাবিরোধী আন্দোলনে যুদ্ধ নেমে পড়েছিলাম। কিন্তু আবারো আমাদের সেই যুদ্ধে নামতে হয়েছে। এই ৫৬ শতাংশ কোটা যতদিন নিপাত হবে না, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা তাসরিন বলেন, আমরা মেধা দিয়ে দেশ গড়তে চাই, কোটা দিয়ে না। এভাবে কোটার আধিপত্য চলতে থাকলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে। আমরা ক্লাস পরীক্ষা সব বর্জন করে দিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। যতদিন দাবি আদায় হবে না, আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুই নম্বর গেট। চার রাস্তার এই মোড় দিয়েই নগরীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দুই নম্বর গেইটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ।
হাইকোর্টের দেওয়া কোটা পূর্ণবহালের রায়ের প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত চারদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন তারা। যতই দিন যাচ্ছে, আন্দোলন বেগবান করে তুলেছেন তারা। এই আন্দোলনের মাঝেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা চার দাবি নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করছেন। এগুলো হলো- ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; পরিপত্র অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছাড়া); সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।