ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ঘিরে ছাত্রলীগের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার রাতে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এই প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারে নিজেদের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ ভালো রাখার অনুরোধ করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে ‘পলিসি অ্যাডভোকেসি’ ও ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক কর্মসূচি শুরু করার কথা জানায় সংগঠনটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব সংগ্রহ, বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তসংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ, উন্মুক্ত আলাপন, যৌক্তিক উপায় গ্রহণ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়—এমন কর্মসূচি পরিহার করার জন্য প্রচার।
পরে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও গতকাল রাতে হলে হলে গেছেন।
গতকাল রাত ১১টার দিকে হলে হলে যাওয়া শুরু করেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে তাঁরা ‘সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুর যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের আহ্বান’ শীর্ষক প্রচারপত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এই কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করেন।
লাইভে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হলের কক্ষগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করমর্দন করছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে তাঁর সঙ্গে ছবিও তোলেন।
সাদ্দাম শিক্ষার্থীদের বলছিলেন, ‘আপিল বিভাগ একটা স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। এই মুহূর্তে তো কোটা নেই। বিষয়টি ভালো একটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে। আমরা এলাম ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোটা ইস্যুটা ক্লিয়ার (স্পষ্ট) করার জন্য। একটা যৌক্তিক সমাধান, সংস্কার যেন হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আমরা চাই না, ক্যাম্পাসে গতবারের মতো পরিস্থিতি হোক। সবাইকে অনুরোধ, ক্যাম্পাসের পরিবেশটা যেন ভালো থাকে। আমরা একটা যৌক্তিক সমাধান চাই এবং শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালীও হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করমর্দন করেন। তিনিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের আহ্বানসংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ করেন। সময়-সুযোগ পেলে এগুলো পড়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন।
গতকাল রাতে প্রচারের পাশাপাশি হলে হলে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আম বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আজ রোববার রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। আজ রোববার গণপদযাত্রা করে তাঁরা রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা জানান, আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। একই সময়ে আন্দোলনে থাকা সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।