কোটার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কোটার ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না ও কোটা প্রথা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে রিটকারীদের মেধার ভিত্তিতে কেন নিয়োগ দেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শামীম সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, শিক্ষা সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। 

পরে আইনজীবী শামীম সরদার জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বরাদ্দ রেখে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা হয়। যেখানে মহিলা ৬০ শতাংশ, পোষ্য ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট পুরুষ ২০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা হয়। অথচ সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যা অসাংবিধানিক। দেশে শত শত শিক্ষিত বেকার যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে মাত্র ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রেখে এ নিয়োগ হতে পারে না। এ কারণে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।
 
রুলে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ এর ৮(২)(গ) এবং (ঘ) বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন তা বাতিল ও আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। একইসঙ্গে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর জারি করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং মেধা তালিক অনুসারে নিজস্ব জেলা/উপজেলায় শূন্যপদে রিট আবেদনকারীদের নিয়োগ দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। 

চার সপ্তাহের মধ্য আইন সচিব, শিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, শিক্ষা সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। 

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কালাবাড়ীর সঞ্জিত সরকার, পাবনার চাটমোহর উপজেলার নতুন বাজারের আনোয়ার হোসেন, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পানিঘাটার হাফিজুর মোল্লাসহ ১৫২ জন হাইকোর্টে রিট করেন

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ দেশের বিভিন্ন জেলার ১৫২ জন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে প্রাথমিক শিক্ষক বিধিমালায় কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।

গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন।

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদ অনুসারে ৩২ হাজার ৫৭৭ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নেওয়া হবে। অবসরের কারণে ১০ হাজারের বেশি পদ খালি হওয়ায় পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। 

কিন্তু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে পদ সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। পদ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেন চাকরিপ্রার্থীরা। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগ এবং পদ সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে ৬১ জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে স্মারকলিপিও দেন চাকরিপ্রার্থীরা। গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, প্রকৃত শূন্য পদ যাচাই-বাছাই শেষে ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। পরে বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদের সঙ্গে পাঁচ হাজার পদ বাড়ানো হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ প্রার্থী। নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিন ধাপে নেওয়া হলেও চূড়ান্ত ফলাফল একবারেই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ হাজার ৮৬২ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৫৯৫ এবং তৃতীয় ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025570392608643