৬ কর্মচারী পদে নিয়োগ দিতে কোটি টাকা ঘুষ নের অভিযোগে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে গত ১৩ জুন দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘স্কুলের ছয় পদে নিয়োগ দিতে কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বুধবার দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বাবলুর রহমান নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত ১৩ জুন দৈনিক শিক্ষা ডটকমে ওই স্কুলে নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। খবরটি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ডা. মোখলেছুর রহমান নিযোগ পরিক্ষা স্থগিত করতে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
সুত্র জানায়, বড়দল আফতাবউদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলে ঘুষের বিনিময়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বন্ধের জন্য গত ৩১ মে অভিভাবক ও বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি দেওয়ানী আদালতে এক মামলা দায়ের করেন। মামলায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ১৪ জনকে বিবাদি করা হয়। মামলায় ২১ দিনের মধ্যে কেনো নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলো আদালত। এরই মাধ্যে আদালতের মামলার কোনো তোয়াক্কা না করে আগামী ১৫ জুন নিয়োগ বোর্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কর্তপক্ষ।
এদিকে ঘুষের বিনিময়ে পাতানো নিয়োগ বন্ধের দাবিতে গত সোমবার দুপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন স্থানীয় অবিভাবক, পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা।
বক্তরা অভিযোগ করেন, ৩ জন ল্যাব সহকারী, ১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন আয়া, ১ জন কারিগরির ল্যাব সহকারীসহ মোট ৬ টি পদে নিয়োগের জন্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। ৬টি পদে ৪৫ জন চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন। স্থানীয় অবিভাবকদের অভিযোগ ৫ টি পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে। কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী অভিযোগ করেন, তাদেরও কাছে একেকটি পদে চাকরির জন্য ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তবে চাহিদামত ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তাদের চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
যদিও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান। তিনি জানান, ৬ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে তাকে জড়িয়ে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছিলো। কর্মচারী নিয়োগ দিতে কোনো আর্থিক লেনদেন করা হয়নি। একটি স্বার্থানেষীমহল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ও তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য সাংবাদিকদের দিয়েছে।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ডা. মোখলেছুর রহমানের নির্দেশে ১৫ জুন নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি আবেদনকারীদের জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।