কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মগোপনে শিক্ষক

পিরোজপুর প্রতিনিধি |

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল হালদার ২০ দিন ধরে আত্মগোপনে আছেন। ওই শিক্ষক বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু তা পরিশোধে না করে তিনি গত ২১ সেপ্টেম্বর আত্মগোপনে চলে যান বলে দাবি স্থানীয়দের। উজ্জ্বল হালদার উপজেলার ৩৪ নং সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

স্থানীয়রা বলছেন, জমি কেনা ও পারিবারিক প্রয়োজনে কাউখালীর সোনালী ব্যাংক, বিভিন্ন  এনজিওসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ঋণ নেন উজ্জ্বল হালদার। ঋণের টাকা পরিশোধে ওইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাগাদা দিলে গত বুধবার  (২০ সেপ্টেম্বর ) স্কুল ছুটির পর থেকে তিনি  আত্মগোপনে চলে যান।  সেই থেকে ওই শিক্ষকের কোনো হদিস মিলছে না। এছাড়াও তিনি জেলার নাজিরপুর উপজেলার তার শ্বশুর বাড়ির এলাকা থেকে তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক, এনজিওসহ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ওই পাওনাদাররা তার কাউখালীর বাসায় টাকার জন্য কয়েকবার আসলে তার ঋণের বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে তার পরিবারেরও অসন্তোষ চলছে।  

পাওনাদার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সহকর্মী দৈনিক শিখ্ষাডটকমকে জানান, উজ্জ্বল হালদার সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ায় স্থানীয় সোনালী ব্যাংক, বিভিন্ন এনজিওসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। এমনকি তিনি নাজিরপুর উপজেলায় তার স্ত্রীর নামেও কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। এ পর্যায়ে ঋণের বোঝা ভারি হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য হিসেব করলে তার ঋণের পরিমাণ কোটি টাকা। পরবর্তীতে পাওনাদার এবং ওইসব প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ে চাপ দিলে গত ২১ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে আত্মগোপনে চলে যান। 

আত্মগোপনে থাকা শিক্ষক উজ্জ্বলের স্ত্রী শিল্পী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি নাজিরপুর উপজেলার একটি স্কুলে শিক্ষাকতা করি। সে সুবাদে বাবার বাড়িতেই থাকি। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আমার স্বামীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার খোঁজে আমি কাউখালীর বাড়িতে আসি। বাড়িতে এসে আমি জানতে পারি সে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্কুল থেকে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। পারে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে তার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় কাউখালী থানায় একটি লিখত অভিযোগ দিয়েছি। সে ব্যাংক, এনজিও, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ঋণ এনেছেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য তাকে কিছু দিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে চাপে ছিলেন। 

সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ্মা রানী দত্ত দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল হালদার গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে অনুপস্থিত। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। শুনেছি তিনি ব্যাংক, এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাই হয়তো পাওনাদারের চাপে আত্মগোপনে আছেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডাকযোগে একটি মেডিক্যাল ছুটির আবেদন চিকিৎসকের সনদসহ স্কুলে পাঠিয়েছেন। 

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ  (ওসি) মো. জাকারিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক উজ্জ্বল হালদার গত ২০ সেপ্টেম্বর স্কুল ছুটির পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তার স্ত্রী সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ওই শিক্ষকের সন্ধান এখনো মেলেনি। তার অনুসন্ধানে পুলিশ কাজ করছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল হালদার গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত রয়েছেন। তাই তার বেতন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর)  তিনি ডাকযোগে অফিসে একটি মেডিক্যাল ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন। তার জন্ডিস ও হেপাটাইটিস হয়েছে বলে আবেদনের সঙ্গে জেলার ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ননী গোপাল রায়ের একটি মেডিক্যাল সনদও আবেদনের সঙ্গে পাঠিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) তাকে সশরীরে স্কুলে উপস্থিত হয়ে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে স্কুলে অনুপস্থিতর কারণ লিখিতভাবে জানানোর জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। এখনো পর্যন্ত তিনি ওই নোটিশের কোনো জবাব দেননি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045559406280518