দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: দেশের কোন কোন জেলা জজ আদালতের (অধস্তন আদালত) এজলাস কক্ষে লোহার খাঁচা বিদ্যমান আছে তার তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন।
প্রতিবেদনে এ ধরনের লোহার খাঁচা বিদ্যমান আছে তা জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া (আরজু)।
অধস্তন (নিম্ন) আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণ না করা কেন সাংবিধানিক বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
লোহার খাঁচা সরানোর দাবিতে দায়ের করা রিটের বিষয়ে প্রথমিক শুনানি নিয়ে আজ রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির।
আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা বসানো কেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১, ৩২ ও ৩৫ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং কেন লোহার খাঁচার পরিবর্তে কাঠগড়া পুনঃস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
এর আগে গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চে এই রিটের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজ রোববার দিন ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী বিচারিক (নিম্ন) আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন।
এরও আগে বিচারিক আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আইনসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।
নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে অনুরোধ জানানো হয়। তা না হলে রিট করে আইনি প্রতিকার চাওয়া হবে বলে আইনি নোটিশ উল্লেখ করা হয়েছিল।
নোটিশের পরও পদক্ষেপের বিষয়ে অগ্রগতি না পেয়ে ১০ আইনজীবী এই রিট করেন। রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন, জি এম মুজাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মিজানুল হক, মুজাহিদুল ইসলাম, মেসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুল ইসলাম, আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী ও সাজ্জাদ সারোয়ার।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির বলেন, দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা অতীতে ছিল না। বর্তমানে প্রায় শতাধিক আদালতে এই ধরনের খাঁচা বিদ্যমান, যার সিংহভাগ ঢাকায় অবস্থিত। এ ধরনের খাঁচা ব্যবস্থা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কারও সঙ্গে নিষ্ঠুর-অমানবিক আচরণ করা যাবে না। অথচ, এই খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর আচরণ করা হচ্ছে। এর সিংহভাগ ঢাকায় অবস্থিত।
যেসব আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা স্থাপন করা হয়েছে, তার একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিলের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয় রিটের প্রার্থনায়। রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকা আসামিদের আদালত কক্ষে লোহার খাঁচায় না ঢোকানোর জন্য রিটের প্রার্থনায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়।