ভাষা মানুষে-মানুষে যোগাযোগের প্রধানতম বাহন। ভাষার কতটুকু মানুষের কোনো জন্মগত বৈশিষ্ট্য আর কতটুকু পরিবেশনির্ভর সে ব্যাপারে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের মতভেদ রয়েছে। তবে সবাই একমত যে, স্বাভাবিক মানুষ মাত্রেই ভাষা অর্জনের মানসিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় এবং একবার ভাষার মূল সূত্রগুলো আয়ত্ত করে ফেলার পর বাকি জীবন ধরে মানুষ তার ভাষায় অসংখ্য নতুন নতুন বাক্য সৃষ্টি করতে পারে। ভাষা মূলত বাগ্যন্ত্রের মাধ্যমে কথিত বা ‘বলা’ হয় কিন্তু একে অন্য মাধ্যমে তথা লিখিত মাধ্যমেও প্রকাশ করা সম্ভব। এ ছাড়া প্রতীকী ভাষার মাধ্যমেও ভাবের আদান-প্রদান হতে পারে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। সম্পাদকীয়টি লিখেছেন আফতাব চৌধুরী।
বিশ্বের ১১টি সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা হলো চীনা, ইংরেজি, উর্দু, স্পেনীয়, আরবি, পর্তুগিজ, রুশ, বাংলা, জাপানি, জার্মান ও ফরাসি। চীনা ও জাপানি ভাষা ব্যতীত বাকি ৯টি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং বিশ্বের ৪৬ শতাংশ মানুষ এসব ভাষায় কথা বলেন। সবচেয়ে বেশি ভাষার আঁতুড়ঘর দুটি দেশ। একটি হলো পাপুয়া নিউগিনি, যেখানে ৮৫০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে; অন্যটি ইন্দোনেশিয়া, যেখানে ৬৭০টি ভাষা লোকমুখে ফেরে। মহাদেশের বিচারে বিশ্বের ৬ হাজারটির মধ্যে ১৫ শতাংশ ভাষায় কথা বলা হয় দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায়, আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, এশিয়াতেও শতাংশের হিসাব ৩০। সবচেয়ে কম ইউরোপে, সেখানে মাত্র ৩ শতাংশ। এদের মধ্যে অনেক ভাষাই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। আবার অনেক ভাষা আছে যেগুলো একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষই ব্যবহার করতেন। বংশধরদের অভাবে সেই ভাষা শেষ হয়ে গেছে।
আজ আমরা কিছু ভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ওই ভাষায় কতটি অক্ষর রয়েছে তা জানার চেষ্টা করব। তামিল : তামিল ভাষায় মূল অক্ষর ৩১টি। তবে যুক্তাক্ষর ধরলে সেখানে আরও ২১৬টি অক্ষর যুক্ত হয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৪৭টি অক্ষর। বিশ্বের যে কোনো ভাষার চেয়ে বেশি অক্ষর রয়েছে তামিলে। খামের : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরনো দেশগুলোর অন্যতম কম্বোডিয়া। খামের সংস্কৃতি বহু শতাব্দীর। খামের ভাষাও খুব সমৃদ্ধ। খামের ভাষায় ৭৪টি অক্ষর আছে, যার মধ্যে ৩৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ১৪টি স্বরবর্ণ। বাকি অক্ষরগুলো যুক্তবর্ণ। তবে ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে ৩৩টি এখন ব্যবহৃত হয়, দুটির কোনো ব্যবহার নেই। থাই : থাইল্যান্ডের ভাষা থাই।
থাই ভাষায় সব মিলিয়ে ৭০টি অক্ষর, যার মধ্যে ৪৪টি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ১৫টি স্বরবর্ণ। এই দুই অক্ষর মিলিয়ে বেশ কিছু যুক্তাক্ষরও তৈরি হয়। মালয়ালম : দক্ষিণ ভারতের কেরলে মালয়ালম ভাষার প্রচলন আছে। এই ভাষায় মোট ৫৮টি অক্ষর, যার মধ্যে ১৩টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬টি ব্যঞ্জনবর্ণ। আর কিছু অন্তচিহ্ন আছে। ওই অঞ্চলের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ভাষাও মালয়ালম অক্ষরেই লেখা হয়। তেলেগু : অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু মুখ্য ভাষা। তেলেঙ্গানা প্রদেশেও। কন্নড় ভাষার সঙ্গে তেলেগু লিপির বহু মিল আছে। কারণ দুটি ভাষারই সৃষ্টি একই জায়গা থেকে। সব মিলিয়ে ৫৬টি অক্ষর আছে এই ভাষায়। সিংহলি : শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রভাষা সিংহলি। অসামান্য সুন্দর এই ভাষার অক্ষরবিন্যাস। সব মিলিয়ে অক্ষরের সংখ্যা ৫৪। এই ভাষাতেও সংযুক্ত অক্ষরের প্রচলন আছে। বাংলা : বাংলায় সব মিলিয়ে অক্ষরের সংখ্যা ৫২। দেবনাগরী লিপির সঙ্গে বাংলা বর্ণের প্রচুর মিল রয়েছে। মূলত এই লিপির জন্ম ব্রাহ্মী থেকে।লেখক : আফতাব চৌধুরী, প্রাবন্ধিক