দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ঈদুল আজহার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে কোরবানির থেকে প্রিয় কোনো আমল নেই বলে এক হাদিসে বর্ণনা করেছেন উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—
কোরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি কর। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)
সামর্থ্যবান ব্যক্তি চাইলে একা কোরবানি করতে পারেন। তবে কয়েকজনের সঙ্গে মিলে শরীকানা বা ভাগে কোরবানি করারও নিয়ম রয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা. আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবিরাও শরীকানায় কোরবানি করেছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ : نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَة
এক হাদিসে হজরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুদাইবিয়ার বছর একটি উটে সাতজন এবং একটি গরুতে সাতজনে শরীক হয়ে কোরবানি করেছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩১৮, ৩০৪৮)
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ: فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَدَنَةٍ
অপর হাদিসে জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজের ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। অতঃপর তিনি একটি উট ও একটি গরুতে আমাদের মধ্যে সাতজন করে শরীক হবার (ও কোরবানি করার) নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩১৮, ৩০৪৯)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَحَضَرَ النَّحْرُ، فَاشْتَرَكْنَا فِي الْبَقَرَةِ سَبْعَةً، وَفِي الْبَعِيرِ سبعة أو عشرة
আরেক হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরেছিলাম। পথিমধ্যে কোরবানীর দিন এলো। তখন আমরা গরুতে সাতজন এবং উটে সাতজন বা দশজন করে শরীক হলাম। (শরীক হয়ে কোরবানি দিলাম)। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪০০৭)
কোরবানিতে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত শরীক হওয়া যায়। তবে কাউকে শরীক করার আগে তার নিয়ত ও আর্থিক স্বচ্ছতা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।
কেউ শরিকে কোরবানি করার পর যদি তিনি মারা যান তাহলে তার কোরবানির বিধান কী হবে?— এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, মৃত্যুর মাধ্যমে কোরবানিতে শরিক ব্যক্তির অংশের মালিকানা তার ওয়ারিসদের কাছে চলে যায়। তাই কেউ কোরবানিতে অংশ দেওয়ার পর মারা গেলে তার অংশ কোরবানি করার জন্য ওয়ারিসদের অনুমতি লাগবে।
যদি তার সকল ওয়ারিস প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, তাহলে তাদের অনুমোদনক্রমে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারবে। এটি নফল কোরবানি হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এর গোশত সাধারণ কোরবানির গোস্তের মতোই খাওয়া যাবে। সদকা করা আবশ্যক নয়।
কিন্তু যদি মৃত্য ব্যক্তির কোনো ওয়ারিস নাবালেগ থাকে, কিংবা কোনো ওয়ারিস অনুমতি না দেয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির অংশের টাকা ওয়ারিসদের ফেরত দিতে হবে। এর জায়গায় অন্য কাউকে শরিক হিসেবে নিতে পারবে।
অনুমতি ছাড়া কোরবানি করলে সেই কোরবানি বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তাই অনুমোদন নেয়া আবশ্যক।