দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ইসলামী ছাত্র শিবির একটি ক্যাডার ভিত্তিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। ৮০ এবং ৯০ এর দশকে সন্ত্রাসের কারণে দলটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং বিতর্কিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।আর এই নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী ছাত্র শিবির এখন আবার ইফতারের নামে ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। প্রতিদিনই চলছে আলোচনা সভা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৮-২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম অনেকটাই গুটিয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ইসলামী ছাত্র শিবির আবার নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে।
রগ কাটা, শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং ক্যাম্পাসগুলোতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। ৮০ এবং ৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এই সমস্ত সন্ত্রাসী হামলায় বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রচুর শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। মাঝখানে ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম ছিল অনেক ম্লান। কিন্তু এখন নতুন করে আবার সংগঠিত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। ইসলামী ছাত্র শিবির এখানে হলগুলোতে গোপন কমিটি করেছে এবং মসজিদভিত্তিক বৈঠকের মাধ্যমে সংগঠন গুছিয়ে ফেলেছে এমন খবর পাওয়া গেছে।
ইসলামী ছাত্র শিবির প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দুই ভাবে কাজ করছে। একটি হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে তারা মিশে গেছে। ছাত্র রাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার হচ্ছে। এদেরকে সাদা চোখে ছাত্র শিবির হিসাবে বোঝার উপায় নেই। আর দ্বিতীয়টি হলো তারা গোপনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন করছে। এখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সব হলে ছাত্র শিবিরের সংগঠন রয়েছে।
বাংলাদেশে কোনোদিন যেটি হয়নি সেটি এখন হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামী ছাত্র শিবিরের গোপন তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। ৮০-৯০ এর দশকে যখন সব ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র শিবিরের উপস্থিতি ছিল সরব, সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও তারা কমিটি করতে চেয়েছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিপক্ষের মুখে তারা ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। যদিও কাটাবন মসজিদকে ঘিরে সেই সময় ছাত্র শিবিরের তৎপরতা ছিল, সেটাও উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫ টি হলে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কমিটির কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সমস্ত হলগুলোতে ছাত্র শিবির গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। ছাত্র শিবিরের তৎপরতার খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অজানা নয় ৷
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, তারা ক্যাম্পাসের মধ্যেও এখন একটা অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র শিবিরের ঘাটি ছিল। মাঝখানে ছাত্রলীগ ছাত্র শিবিরকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছিল বটে। কিন্তু এখন আবার নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে আবাসিক এলাকাগুলোতে ছাত্র শিবির নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাবের প্রেক্ষিতে ছাত্র শিবির আবার নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের নতুন করে এই তৎপরতা এবং সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর জন্য উদ্বেগজনক। কারণ ছাত্র শিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। রগ কাটার জন্য আলোচিত এই সংগঠন। মুক্ত শিক্ষাঙ্গণের জন্য বিপদজ্জনক। এ ব্যাপারে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র : বাংলা ইনসাইডার