ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে শিক্ষকরা, উত্তাল আইডিয়াল কলেজ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

পাঠদান ছেড়ে আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা। গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন তারা। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। 

এর আগে রোববার গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অন্যান্য সদস্যদের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষকরা। অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরাও। সে কারণে ক্লাস বর্জন করে সবাইকে একজোট হয়ে কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে।  

কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম, জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা, ইংরেজি বিভাগের সেগুপ্তা ইসলাম, সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজসহ প্রায় ৭০ জন শিক্ষক এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছেন।

গভর্নিং বডির অপসারণের দাবিতে শিক্ষকরা জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি ও তাদের দোসররা পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ কলেজে কোনো ক্লাস বা কোনো ধরনের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। একইসাথে অনিয়মের হোতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

তারা বলেন, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। প্রায় ১৪ বছর যাবত তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। গভর্নিং বডিতে অন্যসব পদে কিছুটা পরিবর্তন এলেও সভাপতির পদটিতে এত বছরেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। 

সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করছে উল্লেখ করে তারা বলেন, কিছুদিন আগে বিভিন্ন অনিয়ম করে ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ করে সাবেক অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন তারা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কিছু সদস্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় এগুলো কখনোই প্রকাশিত হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

তারা বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তের পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তদন্ত কাজের জন্য কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে।

বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জোর দাবি জানান শিক্ষকেরা।

সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজ বলেন, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের এ কর্মসূচি চলতে থাকবে। সমস্যা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সহযোগিতা পাবো বলে আমাদের বিশ্বাস। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এমনটা প্রত্যাশা করি।

ক্লাস বর্জনে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমস্যা তো কিছু থাকবেই। আমরা শিক্ষক, আমরা তো অভিভাবকও। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চাই। তবে তা একটি সমাধানের মধ্যে দিয়ে হতে হবে। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে এমন কর্মসূচি আসতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, কলেজের দুর্নীতিবাজ কিছু শিক্ষক ও গভর্নিং বডি কলেজটির সুনাম ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আমাদের থেকে পোশাক বাবদ চার হাজার টাকা নেওয়া হলেও দেওয়া হয় নিম্নমানের পোশাক।

এক বিষয়ে অকৃতকার্য হলেই গুনতে হয় ১ হাজার টাকা আবার চার বিষয় ফেল করলেই ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা চাই এমন নিয়ম বন্ধ হোক। শিক্ষার্থীবান্ধব কলেজ হোক। কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডি অপসারণের দাবি জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025689601898193