ক্লাসরুম সংকটে সেশনজটের কবলে পাবিপ্রবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, পাবিপ্রবি |

প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পরও শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, আবাসিক হলের অপ্রতুলতাসহ নানামুখী সংকটে রয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট কাটাতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে একটি একাডেমিক ভবন এবং দুটি হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে এসব কাজের মেয়াদ পাঁচ দফায় বৃদ্ধি করা হলেও এখনো শেষ হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাব, প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় না আনার কারণে কাজে ধীরগতি তৈরি হয়েছে।

এদিকে নানামুখী সংকটের কারণে তৈরি হয়েছে সেশনজট। সেশনজটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বিভাগের মধ্যে ছয় বিভাগের কয়েকশ শিক্ষার্থী এবার ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশও নিতে পারেননি। সেশনজট না থাকলে গতবারই বিসিএসে অংশ নিতে পারতেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, একাডেমিক ভবন এবং দুটি হল নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা এবং আবাসন সংকট অনেকটাই সমাধান হবে।

জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাত্র একাডেমিক ভবন থাকায় ক্লাস এবং পরীক্ষাগ্রহণ বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগে পর্যাপ্ত ল্যাব নেই। ইতিহাস বিভাগে স্নাতকের সাতটি ব্যাচে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর বিপরীতে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ আছে। এ কারণে শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাস, পরীক্ষা শেষ করতে পারছেন না। শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব সংকটে রয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগও। বিভাগটির নিজস্ব কোনো ল্যাব না থাকায় অন্য বিভাগের ল্যাব ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফার্মাসি বিভাগের অবস্থা আরও করুণ।

বেশ কিছু শিক্ষার্থী বলেন, অন্য বিভাগের ল্যাবরুমের শিডিউলের জন্য আমাদের ক্লাস, পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসিন রহমান বলেন, ক্লাসরুম সংকটের কারণে শিক্ষকরা চাইলেও রুটিন করে পরীক্ষা নিতে পারেন না, বিভাগে বসার কোনো জায়গা নেই। দীর্ঘ সেশনজটে আটকে আছি।

বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মোর্শেদ রিয়াদ জানান, একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম যাদের সঙ্গে, তারা অন্য বিশ্ববিদ্যলয়ে পাঠ শেষ করেছে। আমরা পড়ে রয়েছি।

অপরদিকে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরে একটি মাত্র অ্যাকাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, দুটি হল ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য দুটি আবাসিক ভবন নির্মিত হয়েছে। দুটি হলে (একটি ছাত্র ও ১টি ছাত্রী হল) আসনসংখ্যা ৭৮৮। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে ৫২২ জন ও শেখ হাসিনা হলে ২৬৬ জন শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে ৪৮০ কোটি টাকার অধিকতর দ্বিতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১২তলা দুটি অ্যাকাডেমিক ভবন, ১০তলা শেখ রাসেল ছাত্র হল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ডিডিপি মূল্যে ছেলেদের জন্য শেখ রাসেল হল এবং মেয়েদের জন্য শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব হলের কাজ শুরু হয়।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে কাজ শুরুর পর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে হল দুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আরও ছয় মাস কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে পাঁচ দফা কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু কাজ এখনো শেষ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। অনেককেই বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেস ও ভাড়া বাসায়। এসব এলাকায় নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসন সংকটের কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশ ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় মেস বা ভাড়া বাসায় থাকছেন। তবে এসব মেস ও বাসায় তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। শুধু লাভের জন্য গড়ে উঠেছে মেস। বেশি টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ফ্ল্যাট। এসব মেস ও বাসায় বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও আছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভালো না। এতে কষ্ট করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার নিশাত তাসনিম বলেন, হলে থাকতে পারলে খরচ অনেক কমে যেত।

বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করতে পারায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে এসব জরাজীর্ণ মেসে থাকতে হচ্ছে। মেসগুলোতে নেই সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা, ফলে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। নিরাপত্তায় ঘাটতি আছে। প্রায়ই চুরি হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। আবাসন সংকটের কারণে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। অনেককেই বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেস ও ভাড়া বাসায়। এসব এলাকায় নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও।

শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট লায়লা আরজুমান্দ বানু জানান, নির্মাণাধীন দশতলা এক হাজার সিটের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল তৈরি হলে আবাসন সংকট কিছুটা কমে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মো. ওমর ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আসনসংখ্যা ৫২২। নির্মাণাধীন দশতলা এক হাজার সিটের শেখ রাসেল হল চালু হলে আবাসন সংকট অনেকটাই কমবে।

নির্মাণাধীন হল দুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান কাজে ধীরগতির কারণ হিসেবে করোনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনিক জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। হলের নির্মাণকাজ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে নির্মাণকাজের সময় কয়েক দফায় বর্ধিত করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হল দুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হবে বলেও তিনি জানান।

এসব বিষয়ে উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন বলেন, একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হল খুব শিগগির চালু হতে যাচ্ছে। নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষের পথে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট ও শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন হবে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রসারে নির্মিত বিশেষায়িত বিদ্যাপীঠ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে রাজাপুর নামক স্থানে ৩০ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এটি বাংলাদেশের ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন ১৭ বর্ষে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩টি অনুষদের অধীনে সিএসই, ইইই, গণিত ও ব্যবসায় প্রশাসন- এই চারটি বিভাগ ছিল। ১৮০ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক এবং ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৫টি অনুষদ নিয়ে ২১টি বিভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদ্রাসার এডহক কমিটিও নিয়োগ দিতে পারবে - dainik shiksha মাদ্রাসার এডহক কমিটিও নিয়োগ দিতে পারবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সোশ্যাল জাস্টিস শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত - dainik shiksha সোশ্যাল জাস্টিস শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021469593048096