ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ ভার্চুয়াল শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনার মহাদুর্বিপাকে সবচাইতে বেহাল অবস্থা উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। জাতির মেরুদ- শিক্ষা কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ে এখনও অবধি অবরুদ্ধ। স্থবিরতার দুঃসময় পার করা প্রায়ই দেড় বছরেরও বেশি কাল। তবে শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে আটকে ছিল এমনটাও নয়। অবধারিত যাত্রাপথে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানেও হরেক রকম প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের ক্ষেত্রে এই ভার্চুয়াল জগতে পাঠগ্রহণ সার্বজনীন হয়েছে কিনা, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। বুধবার (৯ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকয়ীতে এ তথ্য জানা যায়। 

সম্পাদকয়ীতে আরও জানা যায়, সংসদ টিভিতে ইত্যাদি ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন হলেও সরাসরি জরিপে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। দেশের গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ক্ষুদে শিক্ষার্থী। হতদরিদ্র পিতা-মাতার সন্তানের অনেকের ঘরেই টিভি নেই। আবার যাদের আছে বিদ্যুত ও প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততায় তারা সংসদ টিভি দেখতেও পারেনি। আবার যেসব ক্ষুদে শিক্ষার্থী সংসদ টিভিতে অংশ নিয়েছে তাদের যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ভার্চুয়াল শিক্ষা। নতুন করে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে গেলে শিক্ষা কার্যক্রমের অবধারিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ভাবতেও হচ্ছে। আবারও লকডাউন ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ইতোমধ্যে যে সময় নষ্ট হয়েছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হলে ক্ষুদে ও উদীয়মান প্রজন্ম পড়বে এক অনাবশ্যক জটিলতায়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার চিত্রও সংশ্লিষ্টদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের প্রায়ই ১৮.২% শিক্ষার্থী শিক্ষার পাঠদান কর্মসূচী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য পেশা কিংবা বাল্যবিয়ের প্রকোপে পড়ছে। বালক ছাত্ররা শিশুশ্রমে ঝুঁকে পড়ছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনেও অন্তরায় বলা যেতে পারে। আর বালিকারা পড়ছে বাল্যবিয়ের সামাজিক অভিশাপে।

হিসাব মতে ৩০ লাখ শিশু এখন অবধি শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিযুক্ত হয়ে দিশেহারা অবস্থায় যাপিত জীবনের মোকাবেলা করছে। এসব শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী নিয়ে সরকার নতুন নির্দেশনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষা বিচ্ছিন্ন এসব ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য ছয় মাসে শিক্ষাবর্ষ চালু করার কথা চিন্তার মধ্যে রয়েছে সরকারের। এর জন্য একটি পরিকল্পিত রূপরেখা তৈরিও হচ্ছে। বিদ্যালয় বহির্ভূত এবং ঝরে পড়াদের নিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

নীলফামারী জেলার ৪টি উপজেলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রূপরেখা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৭০টি করে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে এমন কর্মসূচীর সূচনা করা হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। সেখানে একজন করে শিক্ষকও নিযুক্ত করা হবে। শিক্ষক নিয়োগে সমতাভিক্তিক কাঠামো তৈরি করাও আবশ্যক।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

অর্থাৎ ৫০ জন পুরুষ হলে বিপরীতে ৫০ জন নারীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধি চালু থাকবে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন করে চালু করা এই বিদ্যালয় দুই শিফটে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ১২০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। প্রতিবছর এক সেট পোশাক ও একটি করে স্কুল ব্যাগ পাবে। ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য ছয় মাস শিক্ষাবর্ষের রূপরেখা অনুমোদনও দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বেসরকারী সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র। বিদ্যালয় বহির্ভূত এবং ঝরে পড়া শিশু কিশোরদের নিয়ে যে নতুন পথ নির্দেশনা আসছে, তার বাস্তবায়ন সময়ের অনিবার্য দাবি। তবে প্রকল্পটি যাতে দুর্নীতি এবং দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে না পড়ে সেদিকেও কঠোর নজরদারি আবশ্যক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034668445587158