খাতা কলমের পাশাপাশি দাম বাড়বে স্কুলব্যাগের

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ধনী, দরিদ্র সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় পণ্য বলপয়েন্ট কলম। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই কলমেও সবোর্চ্চ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুধু ভ্যাটের কারণে ১ জুলাই থেকে বলপয়েন্ট কলমের দাম বাড়বে। এখানেই শেষ নয়। রাজস্ব আইনের মারপ্যাঁচে প্লাস্টিকের তৈরি টিফিন বক্স, কলমদানি, স্কেলসহ অনেক কিছুরই দাম বাড়বে।

অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দার কারণে গত মাস ছয়েক থেকে স্কুল ব্যাগ, খাতা, পেনসিল, রাবারসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যের দাম কমাতেও কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বৈশ্বিক মন্দার কারণে ক্ষেত্র বিশেষে বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (০১ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে শতাংশের হিসাবে শিক্ষায় বরাদ্দ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। নতুন অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর একক শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাজেটের আকার বাড়ালেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হিসাবে বাড়ানো হয়নি। অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে বেসরকারি স্কুলের বেতন বাড়ানোয় লাগাম টানতে, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করাসহ শিক্ষা খাতে সুশাসন আনতেও কঠোরতা আনা হয়নি, পুরোনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় এমপিও খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা আমলে আনা হয়নি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বলপয়েন্ট কলমের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপে প্রস্তাব করছি।’

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্লাস্টিকের তৈরি অফিস এবং স্কুল সামগ্রীতে সম্পূরক শুল্ক ধার্য থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে; অর্থাৎ স্কুল সামগ্রী হিসেবে বাজারে বিক্রি হওয়া সব ধরনের পণ্য আমদানিকালে এই সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। করোনার ধাক্কায় তাদের অনেকেরই আয় কমে গেছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চহারে টিউশন ফি আদায় করায় অনেকেই সন্তানের পড়ালেখার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়লে অভিভাবকদের কষ্ট আরও বাড়বে। তাই আমাদের দাবি থাকবে, আগামী অর্থবছরের বাজেট চ‚ড়ান্তকালে শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার।’

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষা একজন মানুষের অধিকার। বৈশ্বিক এই সংকটেও সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণে রাজস্ব বসিয়েছে। আবার বাজেট বক্তৃতায় তা স্বীকার করেও নেওয়া হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে। সেখানে শিক্ষা উপকরণের দাম এক টাকা বাড়ালেও অনেকের জন্য বেশি হবে। ডলার সংকট কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না; বরং বৈশি^ক মন্দার কারণে বাড়ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বৈশি^ক মন্দার ধাক্কা সামলাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয় ও আমদানিকৃত কোনো ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর পথ দেখছি না।’

শিক্ষার্থীদের জন্য দরকারি দেশি-বিদেশি সব ধরনের স্কুল ব্যাগের দাম গত ছয় মাসে বেড়েছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। স্কুল ব্যাগ তৈরিতে সুইং মেশিন লাগে। এ ছাড়া কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, সুতা, রিপিট, জিপার, ফিতা, ফাইভার, স্ক্রিন প্রিন্টের জন্য ডাইস আর রং। ডলার সংকটের কারণে সুইং মেশিনসহ সব ধরনের পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে।

দেশের স্কুল ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সালসাবিল এক্সপ্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহামুদুল হক  বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আরও বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এতে স্কুল ব্যাগের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। এবারের বাজেটে স্কুল ব্যাগের দাম কমাতে কিছু থাকবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু নেই। ফলে দাম তো কমবেই না, আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে আরও বাড়তে পারে।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মেটাডোর, গুডলাকসহ বিভিন্ন কোম্পানির বলপয়েন্ট কলম বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে এসব কলমের দাম বাড়বে ৭৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বৈশি^ক মন্দা কবে শেষ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই এলসি বা ঋণপত্র খুলতেও স্বাভাবিক ধারা কবে আসবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক বাজারের এই ধারা চলতে থাকলে পণ্যের দাম কমার চেয়ে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা উপকরণের মধ্যে বলপয়েন্ট প্রয়োজনীয় পণ্য। এখানে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ভ্যাট বসানো ঠিক না বলে মনে করছি। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষা উপকরণে কিছু ছাড় দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কমানো যেত। বাজেট চূড়ান্তকালে এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এসব সুবিধা না দিয়ে শুধু ব্যবসায়ীদের ওপর দোষ চাপানো ঠিক না।’

প্রসঙ্গত, বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকেÑ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া ও শতভাগ উৎসবভাতা প্রদান। আর নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। কিন্তু এসব বিষয়েও বাজেট প্রস্তাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027539730072021