দৈনিক শিক্ষাডটকম, দিনাজপুর : দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ফরিদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও খেলার মাঠ সবই আছে। কিন্তু সেই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য নেই কোনো রাস্তা।
বিদ্যালয়টি ১ নং আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফরিদাবাদ গ্রামে অবস্থিত। এই বিদ্যালয়ের চারপাশে থাকা ফসলি জমি ও মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি উঠে আসে আরো চরম পর্যায়ে।
জানা যায়, ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারীকরণ হয় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৬ জন। মোট শিক্ষক রয়েছেন ছয় জন।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে অত্র এলাকার হরিপদ অধিকারী, সোলেমান আলী ও রবি সেন বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তার জন্য মৌখিক ভাবে জমি দেয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হরিপদ অধিকারী দীর্ঘ ১৫ বছর পর সভাপতি হিসেবে বাদ যাওয়ার পর জমির সীমানা জটিলতার জের ধরে স্কুল যাওয়ার জন্য নির্ধারিত রাস্তা কেটে আবাদি জমির আইলে রূপান্তর করেন। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আইল দিয়ে যাতায়াত করেন।
বিষয় অস্বীকার করে হরিপদ অধিকারী মুঠোফোনে বলেন, আমি কোনো জমি স্কুলকে দান করিনি। এটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি তাই আমি ছেড়ে দেবো না।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বের আকাঁবাকাঁ পথ আর কৃষি জমির পরে ৬৪ নং ফরিদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার চারদিকেই আবাদি জমি। সেখানে ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের মূল ভবনে যেতে পার হতে হবে বাড়ির উঠান ও জমির আইল। স্কুলে ভ্যান ও মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য তাই হাঁটা পথে সংশ্লিষ্টদের স্কুলে যেতে হয়।
শিক্ষার্থীরা ভুট্টা ক্ষেতের আইল ও বাঁশ ঝাড়ের ভেতর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমান বলেন, ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে খুব অসুবিধা হয়। বর্ষাকালে আরো সমস্যা হয় তখন কাঁদা পানি পার হয়ে আসতে হয়।
একই শ্রেণির জ্যোতি সরকার বলেন, রাস্তা না থাকায় ভুট্টা ক্ষেত ও বাঁশঝাড় দিয়ে স্কুলে আসতে আমাদের ভয় লাগে। তখন শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের স্কুলে যেতে সহায়তা করে কিন্তু স্কুলের যাতায়াতের জন্য রাস্তা হলে ভালো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম, শামসুল আলম ও মোহেন সেন বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে চলাচলের জন্য রাস্তা থাকলেও পরে কেনো জানি সেটা কেটে ফেলা হয়েছে। এইজন্য স্কুলে যেতে বাচ্চাদের কষ্ট হয়। তাই এই স্কুলের জন্য সরকারিভাবেই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবি জানায় তারা।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আনছার আলী জানান, রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ সবারই বিদ্যালয় আসতে খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে অভিভাবকরা স্কুলে শিক্ষার্থী পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে তবুও আমরা শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত ও শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে কাজ করছি। তবে সকলের স্বদিচ্ছায় এই রাস্তা নির্মাণ হলে শিক্ষার মান ভালো হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইতিপূর্বে একাধিকবার রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু জমি মালিকের অনিচ্ছায় সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা দূর্ভোগে চলাচল করছে। এটি নিরসনে পুনরায় রাস্তা নির্মাণের জন্য ইউএনও ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দূর্ভোগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশ যাতে ব্যাহত না হয় ও দূর্ভোগ লাঘবে শিক্ষা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা সজাগ বলে তিনি জানান।