খিলগাঁও মডেল কলেজে দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন, গ্রেফতার ১

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে এক ছাত্রীকে নির্যতানের রেশ কাটতে না কাটতে এবার রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজে এক ছাত্রী ও তার সহপাঠী ছাত্রলীগের র‌্যাগিংয়ের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পরীক্ষা দিতে গিয়ে এ নির্যাতনের শিকার হন। গতকাল এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে। তবে র‌্যাগিং ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অন্যদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। বর্তমানে ওই ছাত্রী এ ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে কলেজের পক্ষ থেকে র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না সে বিষয়েও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু জানা যায়নি।

র‌্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রী জানান, তিনি খিলগাঁও মডেল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার তিনি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে তাকে ফোন দিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক বলে পরিচয় দেয়। এরপর তাকে কলেজে যাওয়ার জন্য বলে। কলেজে যাওয়ার পর একটা ছেলে তাকে ডাক দিয়ে কলেজের ছাত্রলীগের রুমে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে গেলে ক্যামেলিয়া, শ্যামল আর সুমনসহ অনেক ছাত্রকে বসে থাকতে দেখেন। কেন মিথ্যা কথা বলে ছাত্রলীগের রুমে নিয়ে আসা হলো জানতে চাইলে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন। হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে থাকেন। মারধর করার পর তাকে ও তার সহপাঠীকে কলেজের অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে যায়। অধ্যক্ষ তাকে তার বাসায় চলে যেতে বলেন। পরে কলেজ থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের দুজনকে আবারো মারতে থাকে।

ওই ছাত্রীর প্রশ্ন, কলেজে পড়তে গিয়ে কেন আমাদের এভাবে র‌্যাগিং ও নির্যাতনের শিকার হতে হবে। এখানে আমার দোষটা কি, সাধারণ ছাত্রী হওয়াতে কি আমাকে এই ধরনের শিকার হতে হবে?

এ ঘটনায় করা মামলায় কলেজ শিক্ষার্থীর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি বনশ্রীর ডি ব্লকের ৫/২ নম্বর রোডের বাসিন্দা। তার মেয়ে খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজের ছাত্র রাসেল ওরফে শান্ত তার মেয়েকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।

প্রতিবাদ করায় কলেজের ছাত্র রাসেল ওরফে শান্ত, সিয়াম, বিপ্লবসহ ১০ থেকে ১২ জন তার মেয়েকে এবং মেয়ের সহপাঠী (ক্লাস বন্ধু) মো. রায়হানকে র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক নির্যাতন করে। এরপর রাস্তায় প্রকাশ্যে দিবালোকে পুনরায় মারপিট করে গলা চেপে হত্যা চেষ্টা করে। তারা চিৎকার দিলে হুমকি দিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর তিনি তার মেয়ে ও মেয়ের ক্লাস বন্ধু রায়হানকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

মামলার বাদী ও নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রীর বাবা আমির হোসেন জানান, মামলার সময় কলেজ অধ্যক্ষ তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেছেন কলেজের সব ছাত্রছাত্রী আমাদের কাছে সমান। আমরা বিষয়টি দেখবো। তবে এ নিয়ে যেনো পত্র-পত্রিকায় কোন সংবাদ না আসে বিষয়টি একটু খেয়াল রাইখেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে কলেজের মানসম্মান যাবে। আমি মাত্র মামলা করেছি। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে অনেকেই জড়িত। ছাত্রলীগের কলেজের নেতারাও জড়িত। সবকিছু প্রমাণের জন্য সময় লাগবে। হয়তো পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছি।

তিনি জানান, আমার মেয়েকে প্রথমে কলেজের একটি রুমে মারপিট করা হয়। ওই রুমে কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আড্ডার রুম। এরপর মেয়েকে নিয়ে পিন্সিপালের রুমে নিয়ে বলানো হয়, তারা কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। পরে আবার তাদের ইন্ধনে কলেজের বাইরেও মারপিট করা হয়। ঘটনায় যাদের নাম জেনেছি তাদের আসামি করেছি। অন্য কারা কিভাবে জড়িত সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছি।

খিলগাঁও থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় শান্ত নামের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কলেজ অধ্যক্ষের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে ফোন করবেন বলে লাইন কেটে দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040848255157471