রেমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের মিনাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচেই বিদ্যালয়টিতে চলছে ১৮৪ জন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বিদ্যালয়টির জন্য টেকসই ভবন নির্মাণে এগিয়ে আসার আ্বান জানান স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষকেরা।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিদ্যালয়টির টিনশেড ঘর দুমড়েমুচড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় এসে দেখেন ঘূর্ণিঝড়ের আগে রেখে যাওয়া বিদ্যালয়টি আর আগের মতো নেই। চেনা শ্রেণি কক্ষগুলো আর নেই, নেই আর ঝুলে থাকা ব্ল্যাক বোর্ডগুলো, তাদের বসার সারিসারি বেঞ্চগুলো চাপা পড়ে আছে ভেঙে চুরমার হওয়া টিনের চাল ও বেড়ার নিচে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও বাধ্য হয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ খোলা আকাশের নিচে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। ক্লাসের সময় বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেন পাশে থাকা ছোট লাইব্রেরী কক্ষে। কখনো তীব্র রোদ কখনো ঝড়ো বৃষ্টি এরই মাঝে শিক্ষার্থীদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়টির পুরো মেঝেতে টিন ও কাঠের গুড়ি পড়ে থাকায় মেঝের ছোট অংশে খোলা আকাশের নিচে কখনো দুই কখনো তিন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একত্রে পাঠদান করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার প্রতি তাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে। ইতিমধ্যে লক্ষ্য করছি বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থতা বোধ করছে।
এলাকাবাসী জানান, নিকটবর্তী কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বিদ্যালয়ে এলাকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে।
তারা বলেন, দ্রুত বিদ্যালয়টির ঘর মেরামত না করা হলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়বে। এ জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বিদ্যালয়টির জন্য টেকসই ভবন নির্মানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগের দিন যথারীতি ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরে আসি, পরের দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি, ঝড়ে বিদ্যালয়টি ভেঙে পড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে ১৮৪ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
আবদুল্লাহপুর ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল খালেক সিকদার জানান, বিদ্যালয়টি এর আগেও কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু এবার ঝড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছি। টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর হওয়ার কারণে ঝড়ে সমস্যায় পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয়টির জন্য নতুন একটি পাকা ভবন তৈরির দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।