দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির টাকায় কেনা ফ্ল্যাটের নিজস্ব অফিসের মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে তিন তারকা হোটেল ও স্পা সেন্টারটির নাম ফার্স ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এন্ড রিসোর্ট। সেখানেই গ প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার রাতে। সাংবাদিকদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলোতে দেখা মিলেছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সনদ জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত কতিপয় সাংবাদিককে। এছাড়াও সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে ঘোরাঘুরি করা বিএনপি ও জামায়াতের কতিপয় কর্মীকে। এছাড়াও কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিককে দেখা গেছে।
এদিকে সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে এমন ব্যয়বহুল হোটেলে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান নিয়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের মনে উঁকি দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে, তারকাখচিত হোটেলে ইশতেহার ঘোষণার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি অনুষ্ঠানে উপস্থিত কোনো সংবাদকর্মী। প্রশাসন ক্যাডার শাসিত শিক্ষা প্রশাসনে বঞ্চিত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের পক্ষে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব ছিলো বা ভবিষ্যতে রয়েছে সেই্ প্রশ্নও কেউ করেনি।
আরো পড়ুন: ঘুষকাণ্ডে শিক্ষাখাতে ছি-ছিক্কার, অভিযুক্ত সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে!
তবে, গ প্যানেলের পক্ষে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কারো প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য আশীর্বাদ নেই বৃহস্পতিবার এমন ঘটনা স্পষ্ট হওয়ার পর প্যানেলটির অনেকেই বদলি আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানা গেছে। রোববার সকাল দশটায় ৭০ জনের বদলি আদেশ হতে পারে যাদের মধ্যে গ প্যানেলে বেশ কয়েকজন প্রার্থীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। শীর্ষ পর্যায়ের অপছন্দের ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে বদলি হওয়া মাউশির পরিচালক অ্ধ্যাপক বেলাল হোসাইন ও প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মইনুলের বিরুদ্ধে নতুন কর্মস্থলে ধারাবাহিক অনুপস্থিতির অভিযোগ ও গত বৃহস্পতিবার ছোট্ট কলেজ বদলি করা পরিচালক শাহেদুল খাবির চৌধুরীকে নিয়ে নানা আলোচনা ছিলো শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মনে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কাল (৯ জুন)। শুক্রবার (৭ জুন) রাতে শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে একটি প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন রুহুল কাদির-হুমায়রা-কামাল। আরেকটি প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন মামুন-জিয়া-নাসির। আর তৃতীয় আরেকটি প্যানেল হচ্ছে শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ।
শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দেশে ২১৪ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোটার ১৩ হাজার ৫৯৬ জন। সারা দেশের ১১টি সাংগঠনিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ সরকারি কলেজ শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটি কলেজ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তারা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
প্রসঙ্গত, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান নিশ্চিত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি, চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষা প্রশাসনের আসন্ন নির্বাচনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ অন্য বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।
যেসব বিষয় অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এই প্যানেল তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে। অগ্রাধিকারের প্রথমে রয়েছে পদোন্নতির চলমান প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা, অধ্যাপকদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, গ্রেড বিবেচনায় প্রভাষকদের পদোন্নতি চালু করা ইত্যাদি।