গণতন্ত্র কোনো পণ্য নয় : রাষ্ট্রপতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়। মনে চাইলো কোনো দেশ থেকে পরিমাণমতো গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করলাম, বিষয়টি এমন নয়। চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সংসদের কার্যবাহে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যগুলো পড়লে বুঝা যায় সংসদকে কিভাবে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হয়। শুক্রবার জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পরমতসহিষ্ণুতা, বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া এবং অন্যকে কিভাবে সম্মান দেওয়া যায় এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় নজির রেখে গেছেন। আমাদের সৌভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বমানের কিংবদন্তি নেতা পেয়েছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তাঁর নীতি-আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তাঁর দেখানো পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়। 

রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে। দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে যায়। আবার গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। গণতন্ত্রহীন অবস্থায় যে উন্নয়ন হয় তা কখনো সার্বজনীন হতে পারে না। সে উন্নয়ন হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেই মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে শূন্য থেকে দেশকে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু শহিদ না হলে দেশ অনেক আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো। ৭৫-এর পর উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অনেকদিন অবরুদ্ধ ছিল। ফলে দেশ অনেক পিছিয়ে পড়ে। গত দেড় দশকে সরকার ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার ফলে দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব উন্নয়নের এই ধারাকে এগিয়ে নেওয়া। 

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদ। সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সরকারের সকল বিভাগের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে আদর্শ স্থাপনের গুরুদায়িত্ব বর্তায় এ মহান সংসদের সংসদ সদস্যদের উপর। কেবল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতরাই সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং জনগণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। এ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী উভয়পক্ষের সংসদ সদস্যগণই জাতির নিকট দায়বদ্ধ। এই উপলব্ধি থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে আমি এ মহান সংসদে সংসদ সদস্যদের গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। 

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলা  ১১টায় এ অধিবেশন শুরু হয়। এটি চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশন ও চলতি বছরের দ্বিতীয়। এর আগে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ অধিবেশনের মেয়াদসহ বিস্তারিত কার্যসূচি চূড়ান্ত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023720264434814