গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে রাবির তিন শিক্ষকের পদযাত্রা

রাবি প্রতিনিধি |

গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা। 

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে শুরু হয়ে বেলা ১টায় এ পদযাত্রা শেষ হয়।

এসময় তারা নগরীর সাহেব বাজার, সি অ্যান্ড বি মোড়, লক্ষ্মীপুর, ঘোষপাড়ার মোড়, মালোপাড়ার মোড়, নিউ মার্কেট প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার এসে তাদের পদযাত্রা শেষ করে।   

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল হক, অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী ও বারি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম রমজান এ পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. ফরিদ খান বলেন, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র কখনোই এক জিনিস নয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চরমভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই গণতন্ত্র মেরামতের দাবি আজকে আমাদের এই নির্দলীয় নীরব পদযাত্রা। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজ চরমভাবে নিষ্পেষিত এবং উপেক্ষিত বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে এবং বিরোধী দল ও মতের প্রতি দমন-পীড়ন মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমাদের এই নাজুক অবস্থার সুযোগে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তির কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে, বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর হবে না। দেশ ক্রমশ একটি রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা আমাদের শংকিত এবং উদ্বিগ্ন করছে। আমরা সংঘাত চাইনা, দেশে শান্তি চাই, গণতন্ত্র ফিরে চাই! এ দেশ আমাদের, এ স্বাধীনতা আমাদের সচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে গণতন্ত্র রক্ষায়।

এ অধ্যাপক আরও বলেন, গণতন্ত্র গোল্লায় যাচ্ছে, গুম হয়ে যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক অধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে- আর আমরা চেয়ে আছি কে এসে আমাদের গণতন্ত্রের অসুখ সারিয়ে তুলবে। গণতন্ত্র যখন জনগণের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সুযোগ সংকুচিত হয় তখন জনগণকেই এগিয়ে আসতে হয় সবার আগে। গণতন্ত্রের বিপন্নতায় যুগে যুগে জনগণ এগিয়ে এসেছে এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন।

তিনি বলেন, দেশ যখন গণতান্ত্রিক মহাসংকটের কিনারে দাঁড়িয়ে তখন দেশের মুক্তিকামী এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমরা নীরব থাকতে পারি না। নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটুর মতে, 'আপনি যদি অন্যায়ের পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ হন তবে আপনি নিপীড়কের পক্ষ বেছে নিয়েছেন।আমরা দেশকে ভালোবাসি, গণতন্ত্রের গভীর অসুখে আমরা ব্যথিত।

পদযাত্রার ছবি শেয়ার করে এক ফেসবুক পোস্টে এই অধ্যাপক লিখেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে'৷ কিন্তু দেশে  গণতন্ত্র কার্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত, বিপন্ন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজ চরমভাবে নিষ্পেষিত এবং উপেক্ষিত – বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে এবং বিরোধী দল ও মতের প্রতি দমন-পীড়ন মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমাদের এই নাজুক অবস্থার সুযোগে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তির তৎপরতা বেড়েছে, তাঁরা বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা দেশের জন্য মোটেও কল্যাণকর হবে না। দেশ ক্রমশ একটি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা আমাদের শংকিত এবং উদ্বিগ্ন করছে। আমরা দেশে শান্তি চাই, গণতন্ত্র ফিরে চাই! এ দেশ আমাদের, এ স্বাধীনতা আমাদের। সচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে গণতন্ত্র রক্ষায়। আমাদের সংবিধান শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার দিয়েছে। 

তারই অংশ হিসেবে আসুন, গণতন্ত্র মেরামতের দাবিতে একটি নির্দলীয় নীরব পদযাত্রায় শামিল হয়। গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটু পথ হাঁটি। গণতন্ত্রের অন্ধকার দূর করতে দেশপ্রেমের একটু আলো ছড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অংশ নিই। দেশের জন্য না হয় একটু কষ্ট, কিছু ঘাম, কিছু ক্লান্তি উৎসর্গ করি। অন্তত, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন আমাদের ভীরু, কাপুরুষ না ভাবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025229454040527