গণিতের ভয়েই স্বপ্নভঙ্গ

বোরহান হক সম্রাট |

বিধান অনুযায়ি ২ মাসের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশিত হয়েছে। রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে প্রায় পৌণে ২১ লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষার এ মহা আয়োজন ঠিকভাবে সম্পন্ন করা নি:সন্দেহে দায়িত্বপূর্ণ এক কঠিন সংগ্রাম। যেহেতু সব সংগ্রামের সাফল্য নিয়ে নানা বিশ্লেষণ উঠে আসে, আমরাও সেভাবেই ফলাফলের পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়েছি। যেখানকার কিছু উপাত্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে।

প্রথমেই উঠে আসতে পারে গতবারের চেয়ে প্রায় ৪৭ হাজার বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও ৮৬ হাজারের বেশি জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার বিষয়টি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ফলাফল সামনে নিয়ে এলে এই বিশ্লেষণ আরো অবাক করে দেয়। সেখানে দেখা যায়, সাড়ে ২২ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এবারের মতো ১ লাখ ৮৩ হাজার।

অথচ আগের বারের চেয়ে ২ লাখের কম শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও পরের বছর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে যান আগের বছরের চেয়ে ৮৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অর্থাৎ ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। ফলে জিপিএ-৫ এর গত ৩ বছরের পরিসংখ্যান আমলে নেয়া হলে সার্বিকভাবে খাতা দেখার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একবার নটরডেম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা এমন পরিসংখ্যানকে বিভ্রান্তিকর বলেছিলেন।

এবারের ফলাফলে বিষয় ভিত্তিক পর্যালোচনায় একটি বিষয় চোখে পড়ে। সেটা হলো- ১০টি বোর্ডের ইংরেজির ফলাফল। দেখা যায়, অঞ্চলভিত্তিক ৯টি বোর্ডের সবাইকে পেছনে ফেলে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে উত্তীর্ণের হার শতকরা ৯৬ দশমিক ৮২ ভাগ। যেখানে ঢাকা বোর্ডের একই ফল ৯০ দশমিক ৮৩, সিলেটের ৯১ দশমিক ৭২ বা দিনাজপুরের ৯০ দশমিক ৯৮। এই বোর্ডের উপাত্ত অনেককিছুই দেখায়। যেমন ইংরেজিতে ১শ জনে ৯৭ জনই অথবা রসায়নে ১শ জনে প্রায় ৯৮ জনই উত্তীর্ণ হলেও বোর্ডের গড় উত্তীর্ণ কীভাবে ৭৪ দশমিক ৭০ ভাগ হয়? এখানেও গণিত ফ্যাক্টর কী। এবার মাদরাসা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাধারণ গণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ দশমিক ৭৩ ভাগ। তারপরও কেনো ৭৪ ভাগ হয়, তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তবে ইংরেজির এই ফল আমাদের সংশয়ের মধ্যেও আশাবাদী করতে পারে।                    

বিষয়ভিত্তিক আরেকটি ফল চমকে দিতে পারে। বাণিজ্য শাখার প্রধান বিষয় হিসাববিজ্ঞানে দিনাজপুর বাদে সব বোর্ডে উত্তীণের হার শতকরা ৯৫ ভাগের ওপরে। শুধু তাই নয়, রাজশাহী বোর্ডে এই উত্তীর্ণর হার ৯৯ দশমিক ২৬। যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাণিজ্যতে শতকরা ৯৮ ভাগই হিসাব বিজ্ঞানে উত্তীর্ণ। অথচ এই ৯টি শিক্ষাবোর্ডে বাণিজ্যে বিভাগে উত্তীর্ণের গড় হার ৮২ দশমিক ২২ ভাগ। 

এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাণিজ্যর সবচেয়ে কঠিন ও প্রধান বিষয়ই হলো হিসাববিজ্ঞান। সেই বিষয়ে ভালো নম্বর তুলে পাস করলেও সার্বিক বিভাগের ফল খারাপ নিয়ে তারা কিছুটা হতচকিত। 

তবে পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা হিসাববিজ্ঞানে প্রায় শতভাগ উত্তীর্ণের রেকর্ড গড়লেও সাধারণ গণিতে হয়তো বিপদে পড়ছেন। এবারের বিষয়ভিত্তিক

ফল দেখাচ্ছে- সাধারণ গণিতে ঢাকাবোর্ডে উত্তীর্ণের হার শতকরা মাত্র ৮০ দশমিক ৫৬। এবং গণিতের এই ফলের প্রভাবে পুরো ঢাকা বোর্ডের ফল এবার নেমে গেছে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশের নিচে। একইভাবে ভুগেছেন চট্টগ্রাম বোর্ডের শিক্ষার্থীরাও, যারা গণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন শতকরা ৮৬ দশমিক ৫১ জন। বোর্ডের ফল ৭৮ দশমিক ২৯ ভাগ। 

তবে এবারের ফলাফলের সবচেয়ে অমানবিক চিত্রের দেখা মেলে মানবিক বিভাগেই। এবারের সব বোর্ডের, সব বিষয়ের মধ্যে সর্বনিম্ম ফল কুমিল্লার মানবিক বিভাগে, যাদের উত্তীর্ণের হার শতকরা ৬১ দশমিক ৮৪ ভাগ। তার খুব কাছেই রয়েছেন ঢাকা বিভাগের মানবিক পরীক্ষার্থীরা, তাদের উত্তীর্ণের হার ৬২ দশমিক ৫৪ ভাগ। অথচ এখানেও বৈপরীত্য আছে। যেমন মানবিকের অন্যতম প্রধান বিষয় পৌরণীতিতে উত্তীর্ণের হার যেনো সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। পৌরনীতিতে রাজশাহী বিভাগের পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ৮৬ ভাগ, চট্টগ্রামে ৯৯ দশমিক ০৯ ভাগ। দিনাজপুর আর যশোর বাদে সব বোর্ডের পৌরনীতির ফল ‘মারদাঙ্গা’ রকমের। পুরো ফল প্রমাণ করে গণিতের ভালো শিক্ষক আর গণিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ছাড়া পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্যতার দায়ও আমাদের নিতে হবে। 

পরিসংখ্যান বলছে, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। ফলে এটা মেনে নিতে হবে যে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৩ জন শিক্ষার্থী অকৃতর্কায হয়েছেন। এই শিক্ষার্থীদের দায় নেবে কে?  

তবু আমাদের মেয়েরা এবার অনেকটা বাচিঁয়ে দিয়েছে বলা যায়। ছাত্রীদের ফল ভালো না হলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারতো। কারণ এবারের ফলাফলে ৯ সাধারণ বোর্ডে ছাত্রের চেয়ে ৯০ হাজারের বেশি ছাত্রী পাস করেছেন। ছাত্রদের চেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৭ হাজার বেশি ছাত্রী। এটা নি:সন্দেহে আশাবাদী করে রাখে।   

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025620460510254