রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে গভর্নিং বডির সদস্যদের অবৈধভাবে সম্মানী বাবদ ছয় বছরে দেড় কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, অধ্যক্ষ পরিচয় দেয়া প্রধান শিক্ষক ও সদস্যদের দেয়া হয়েছে এ টাকা। শুধু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের এ খাতে ৭৫ লাখ টাকা বিলিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের। গভর্নিং বডির সদস্যদের সম্মানী দেয়ার বিধান না থাকলে কলেজ তহবিলের এ বিপুল পরিমান টাকা বিলানো হয়েছে।
বিধি-বহিভূতভাবে এ বিপুল পরিমানের টাকা নেয়া সরকার মেনে নিলেও এর ১০ শতাংশ কর কর্তনের কথা। কিন্তু সরকারকে এ বাবদ কর দেয়নি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এতে সরকার ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। এরপর কয়েক মাস তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তদন্ত দল। এতে শতকোটি টাকার অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। তদন্তের কপি দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে। গভর্নিং বডির সদস্যদের অবৈধভাবে সম্মানী বাবদ দেয়া দেড় কোটি টাকা প্রতিষ্ঠান তহবিলে ফেরত নেয়ার সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
তদন্ত প্রতিবেদনে ডিআইএ বলছে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য সচিব পদে থাকা প্রধান শিক্ষক ও সদস্যদের সম্মানী বাবদ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৭৫ লাখ ২২ হাজার টাকা, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এ খাতে দেয়া হয়েছে ২০ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনার সময় যখন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো তখনও দেয়া সম্মানী বাবদ গভর্নিং বডিকে দেয়া হয়েছে ১১ লাখ টাকা। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে।
ডিআইএ বলছে, গভর্নিং বডির সম্মানী বাবদ টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য সচিব ও সদস্যদের পদগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পদ হিসাবে গ্রহণ ও ব্যবহার করা হয়েছে। সম্মানী নেয়ার স্বপক্ষে কোনো বিধান না থাকায় গভর্নিং বডির সম্মানী বাবদ নেয়া টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরতযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে!গভর্নিং বডির সভার সম্মানী বাবদ ব্যয় হওয়া টাকার বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন না করে ১৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা পাওয়া থেকে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে।
ডিআইএ আরও বলছে, সরকার যদি এই সম্মানী গ্রহণ বিধিসম্মত হিসেবে মেনে নেয় তবে আয়কর বাবদ সরকারের প্রাপ্য ১৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে আয়কর কর্তনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি পূরণ করা আবশ্যক।
গত অক্টোবরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত অপর এক তদন্তে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। তিনি ইতিমধ্যে আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বা ট্রাস্ট তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা বৈধ নয় এবং তারা তা দিতে পারে না। কিন্তু এরপরও ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।