ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা কয়েকদিন আগে চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। যে কোনো মুহূর্তে ভেতরে ঢুকে অভিযান চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছিল। তাদের দাবি এ হাসপাতালের নিচে হামাস যোদ্ধাদের গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। আর এখান থেকে রোগী ও সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস যোদ্ধারা। যদিও হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের এ দাবিকে নাকচ করে দেয়া হয়।
গতকাল ইসরায়েলি সেনারা আকস্মিকভাবে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ভেতরে ঢুকেই তারা সবখানে হামাস যোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। বিশেষ করে গোপন সুড়ঙ্গ আছে কি না তার অনুসন্ধান করতে থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো গোপন সুড়ঙ্গ বা হামাসের কোনো যোদ্ধার সন্ধান পায়নি ইসরায়েলি সেনারা। হামাসের হাতে আটক কোনো জিম্মিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি আল শিফা হাসপাতালে।
উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ায় হাসপাতালের ভেতরে ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে থাকে ইসরায়েলি সেনারা। হাসপাতালের বিশেষায়িত সার্জারি বিভাগের ভেতর ইসরায়েলি কমান্ডোরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা সব দেয়াল ও পার্টিশন ভেঙে ফেলে। আরো বেশ কিছু কক্ষ গুঁড়িয়ে দেয়। হাসপাতালের বেসমেন্ট থেকে এক এক করে অনেক মানুষকে বাইরে বের করে এনে জেরা করা হয়। তাদের অনেককে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে জেরা করা হয় বলে জানা গেছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।উত্তর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফায় গতকাল আকস্মিকভাবে ঢুকে ব্যাপক অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনারা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক। ইসরায়েলের দাবি, হামাস কর্মীরা আল শিফা হাসপাতালে লুকিয়ে আছে এবং এ হাসপাতালটির নিচেই ফিলিস্তিনি এ সংগঠনটির ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। অভিযানের শুরুতে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। এ সময় এক সেনা লাউডস্পিকারে বলে, ‘১৬ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী পুরুষ মাথার ওপর দুই হাত তুলে দাঁড়ান। ভবন থেকে বের হয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এসে আত্মসমর্পণ করুন।’ এ সময় রোগী ও তাদের স্বজনরা মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেনারা এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে হামাস যোদ্ধাদের খোঁজার সময় ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। কিন্তু অভিযানে কোনো গোপন সুড়ঙ্গ বা হামাস যোদ্ধার সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদেরও খোঁজ পায়নি তারা। এ রকম অবস্থায় হাসপাতালে ভেতরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি সেনারা। বিশেষায়িত সার্জারি বিভাগের ভেতর ইসরায়েলি কমান্ডোরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা সব দেয়াল ও পার্টিশন ভেঙে ফেলে। প্রতিটি কক্ষের মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলার পর সেনারা বেসমেন্টে নামে। শেষে এক এক করে প্রাপ্ত বয়স্ক সব পুরুষকে হাসপাতাল চত্বরে নিয়ে এসে জেরা করতে থাকে। এ সময় অনেককে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র অবস্থায় জেরা করা হয়। জেরা করার সময় তাদের চারদিকে ছিল ট্যাঙ্কের বহর।
এদিকে আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেন, গাজার আল শিফা হাসপাতালে সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘মানবতাবিরোধী নতুন অপরাধ’ করছে। এক বিবৃতিতে কাইলা বলেন, আল শিফার চিকিৎসা কর্মী, রোগী ও সেখানে থাকা উদ্বাস্তুদের জীবনের জন্য দখলদার বাহিনী সম্পূর্ণ দায়ী বলে ধরব আমরা।