গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ঘটেছে বিপরীত। উল্টো ভোগান্তি ও হতাশা বেড়েছে। গুচ্ছ কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও সিদ্ধান্তে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এমনি একজন মাহফুজ আলম অনি-(২০)। নীলফামারীর চিলাহাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে প্রস্তুতি নেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য।

এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বি-ইউনিটে ৫৫.৫ নম্বর পান তিনি। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেন আট বিশ্ববিদ্যালয়ে। চতুর্থ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। অপেক্ষা করতে থাকেন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সুযোগ করে নেওয়ার। তবে গত ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তম মেধা তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, সপ্তম মেধা তালিকা থেকে ভর্তিচ্ছুরা গুচ্ছভুক্ত এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হলে তাকে অবশ্যই পছন্দমতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। এই পর্যায় থেকে প্রাথমিক ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না (বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন সম্পূর্ণরুপে বন্ধ)। ফলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাধ্যতামূলকভাবেই ভর্তি হতে হচ্ছে তাদের। গুচ্ছ কমিটির এই সিদ্ধান্তে শুধু অনিই নয়; বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ফলে ২০ ডিসেম্বর শুরু হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা বললেও গত বৃহস্পতিবার গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম মেধা তালিকায় মাইগ্রেশন বন্ধের পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে গুচ্ছ ভর্তি-সংক্রান্ত মূল কমিটি। তবে দ্রম্নত ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান একাধিক উপাচার্য।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ কমিটি পরীক্ষা শেষ করে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে দেরিতে-এখন এই দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছে। গুচ্ছ কমিটির এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী মাহফুজ আলম অনি বলেন, 'গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্তে আমি ভালো স্কোর নিয়েও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবো না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকায় তা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এটা অন্যায়। উপাচার্যদের সিদ্ধান্তে অসহায় আমরা।'

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু ওবায়দা বলেন, 'উপাচার্যদের এই সিদ্ধান্ত এক প্রকার জুলুম। আমাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে বলেছিল, মাইগ্রেশনে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় পাবে শিক্ষার্থীরা, কিন্তু এখন তারা উল্টোটা করছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে তড়িঘড়ি করে ভর্তি শেষ করতে চাইছে।' বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তে গুচ্ছ কমিটি অটল থাকলেও মুখ খুলতে চায় না গুচ্ছ কমিটিভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।

একাধিক উপাচার্য বলেন, কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে আমরা পরামর্শ বা সঠিক নির্দেশনা দিতে পারি। কিন্তু মুখপাত্র আমরা নই। তবে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির নেতৃত্বে থাকা জবি উপাচার্য এবং শাবিপ্রবি উপাচার্যকে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। অনেকে কোনো প্রকার মন্তব্য না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

নাম গোপন রাখার শর্তে এক উপাচার্য বলেন, 'এখানে এক-দুইজন সদস্যের দ্বিমতে কিছুই হয় না। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ মেধা তালিকা পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন দ্রম্নত ক্লাস শুরু করতে চায় সবাই। যে কারণে তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে। তবে সবার কথা চিন্তা করা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেশে আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে: উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ - dainik shiksha দেশে আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে: উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031359195709229